চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘ এক বছর ধরে আটকে আছে পলাতক সাবেক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৩১টি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি ব্যবহার না করে দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় বন্দরে পড়ে থাকার কারণে এর অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত বছরের শেষ প্রান্তিকে এসব গাড়ির নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রত্যাশিত দর না ওঠায় বিক্রয় কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি গাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা হলেও প্রথম নিলামে সর্বোচ্চ দর ছিল মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। এমন তীব্র অবমূল্যায়নের কারণে নিলাম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (নিলাম) সাকিব হাসান বলেন, “উচ্চমূল্যের এই গাড়িগুলো সঠিক বাজারমূল্যে বিক্রি হওয়া জরুরি। প্রথম নিলামে যে দর উঠেছিল তা অত্যন্ত অবমূল্যায়িত। তাই পুনরায় নিলামের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও আমরা অবমূল্যায়িত দামে বিক্রি থেকে বিরত থাকছি এবং বিষয়টি এনবিআরের কাছে প্রেরণ করেছি।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (শুল্কনীতি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমরা চাই না এসব বিলাসবহুল গাড়ি লোকসানে বিক্রি হোক। সরকারি ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর অথবা ন্যায্য দর নিশ্চিত করে পুনরায় নিলামের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।”
আইনগত দিক থেকে বিষয়টি বেশ জটিল। শুল্কমুক্ত সুবিধা সাধারণত সংসদ সদস্য, কূটনীতিক এবং নির্দিষ্ট কিছু সংস্থার জন্য প্রযোজ্য। অভিযোগ রয়েছে, কিছু প্রাক্তন এমপি এই সুবিধার অপব্যবহার করে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করে ব্যক্তিগত ব্যবহার না করে সরাসরি বিক্রি করেন, যা কাস্টমস আইন, ১৯৬৯ এবং দুর্নীতি দমন আইন উভয়ই লঙ্ঘন। ফলে এসব গাড়ি জব্দ করে চট্টগ্রাম বন্দরে রাখা হয়েছে এবং মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকে এই ঘটনা দেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ। শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহারে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তদুপরি দীর্ঘদিন গাড়িগুলো বন্দরে পড়ে থাকার কারণে রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাড়ছে। গাড়ির ব্যাটারি, ইলেকট্রনিক সিস্টেম ও যান্ত্রিক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এর পুনরায় বাজার মূল্য কমে যেতে পারে।
রাজনৈতিক ও নাগরিক পর্যায় থেকেও বিষয়টি সমালোচিত হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্বচ্ছতা-নির্ভর সংস্থা দাবি করেছে, শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। টিআইবি-এর এক কর্মকর্তা বলেন, “এ ধরনের দুর্নীতি শুধু গাড়ি নিলামের সীমাবদ্ধ নয়, সংশ্লিষ্টদের সম্পদের উৎস যাচাই ও শাস্তি নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।”
এনবিআরের নির্দেশনায় কাস্টমস হয়তো এসব গাড়ি সরকারি সংস্থা, পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করবে অথবা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পুনরায় নিলাম আয়োজন করবে। তবে বন্দরের জায়গার সীমাবদ্ধতা ও গাড়িগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বাড়তে থাকায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। নিলামের নির্দিষ্ট তারিখ ছিলো গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় নিলামের সময় এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এফপি/রাজ