দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে থাকা যশোরের কেশবপুর, মণিরামপুর, ডুমুরিয়া, অভয়নগর ও ঝিকরগাছা উপজেলার লাখো মানুষের জন্য আশার নতুন বার্তা নিয়ে ভবদহ এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন চীনের চেংগিং ওয়াটার রিসোর্সের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। সরকারের নেয়া নদী খনন প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা ও বাস্তবায়ন সম্ভাব্যতা পর্যালোচনার লক্ষ্যে এই পরিদর্শন পরিচালিত হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিনিধি দলটি প্রথমে ভবদহ সুইচ গেট এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে তারা কেশবপুর উপজেলার আগরহাটি সোলগাতি ব্রিজ সংলগ্ন তেলিগাতি নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রাপ্ত মানচিত্র ও তথ্য পর্যালোচনা করেন।
প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন, যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো: আজাহারুল ইসলাম, কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ নেওয়াজ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার, স্থানীয় দোভাষী এবং প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা।
ভবদহ অঞ্চলে পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে নির্মিত হয় স্লুইস গেট। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শ্রীনদী, হরিনদী, টেকানদী, মুক্তেশ্বরি ও তেলিগাতি নদীগুলো ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। ১৯৮২ সালের পর থেকে মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ২০০৫ সালে ভবদহ স্লুইস গেট ৪৮ দিন বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। কেশবপুর ও মণিরামপুরসহ পাঁচটি উপজেলার শত শত গ্রাম, হাটবাজার পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং প্রায় ১৫ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ২০১৬ সালের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় ৫০০টি গ্রাম একযোগে ডুবে যায়। হাজার হাজার মৎস্য ঘের, পাকা-আধাপাকা ঘরবাড়ি ও চাষের জমি ধ্বংস হয়। হাজার কোটি টাকার ক্ষতির পাশাপাশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এই জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে কাশিমপুর ভদ্রা নদীর মুখে ক্রসবাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরবর্তীতে ২০০২ সালে শ্রীহরি ও টেকা নদী খনন করা হলেও তা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দেয়নি।
বর্তমান অন্তবর্তী সরকার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শ্রীহরি, টেকা ও তেলিগাতি নদীসহ তিনটি নদী পুনরায় খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর সফল বাস্তবায়নে চীনা প্রতিষ্ঠান চেংগিং ওয়াটার রিসোর্সের কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, চীনের উচ্চ প্রতিনিধি দল ভবদহ ও আশপাশের নদীসমূহের বাস্তব অবস্থা পরিদর্শন করে পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায়ে মতামত দিয়েছেন।
যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম জানান, চীনের এই প্রতিনিধি দলের আগমন সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টারই প্রমাণ। আমরা আশা করছি, তারা ভবদহ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এই উদ্যোগকে ঘিরে পাঁচ উপজেলার জনগণের মধ্যে ব্যাপক আশাবাদ বিরাজ করছে। দীর্ঘ জলাবদ্ধতা, বন্যা ও দারিদ্র্যের চক্র থেকে মুক্তি পেতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা। কৃষক সলেমান সরদার, নদীগুলোর মুখ খোলা আর খনন হলে আমাদের চাষবাস ফের শুরু হবে। এই পদক্ষেপ আমাদের জন্য নতুন জীবনের সূচনা হতে পারে।
এফপি/রাজ