অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় স্থান হলো ডিম পাহাড়। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি সর্পিল পথ আর রাস্তার দু’ধারে সবুজাভ পাহাড়। ঘন সবুজ পাহাড়ের পাথুরের ঢালে বয়ে চলছে ঝর্ণাধারা। কল্কল্ শব্দে ঝরে এসব ঝর্ণার শীতল জল।
অন্যদিকে নীল আকাশে ভাসমান সাদা মেঘ বলছে যাবো যাবো। আবার কিছুদুর পর পায়ের নীচে এসে হুমড়ি খায় বাষ্পীয় মেঘ। বান্দরবানের অপরূপ প্রকৃতির মাঝে নির্মিত দেশের সবচেয়ে উঁচু আলীকদম-থানচি সড়ক এর বর্ণনা কারো পক্ষে সহজে দেয়া সম্ভব নয়। অবর্ণনীয় সবুজ প্রকৃতির মাঝে আরেক বিস্ময় সড়কটির ২২ কিলোমিটার পয়েন্টে অবস্থিত ‘ডিম পাহাড়’। এ ডিম পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে হাতে ছোঁয়া যায় আকাশের সাদা মেঘ।
দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় আলীকদম-থানচি সড়কের ‘ডিম পাহাড়’। প্রকৃতির অনাবিল সৌর্ন্দয আর বৈচিত্র্যময় পরিবেশে এ যেন প্রকৃতির দান! পাহাড়ের বুকে ৩৩ কিলোমিটার এ সড়কপথে যাত্রা নয়, বলা যায় রোমাঞ্চও। ডিম পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তাটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। আলীকদম থেকে এই রাস্তা ওপরের দিকে উঠেছে এবং ডিম পাহাড়ের কাছাকাছি রাস্তার উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৫০০ ফুট।
অপরূপ প্রকৃতির মধ্যে নির্মিত দেশের সবচেয়ে উঁচু আলীকদম থানচি সড়ক, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫০০ হাজার ফুট উঁচু আলীকদমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে ভ্রমণ পিপাসুদের মধ্যে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে থানচি টু আলীকদম সড়ক। সব প্রকৃতির মধ্যে আরেক বিস্ময় সড়কটির ২২ কিলোমিটার পয়েন্টে অবস্থিত ডিম পাহাড়। ডিম পাহাড়ের উপর দাঁড়ালে এক অন্য রকম অনুভূতি উপভোগ করতে পারবেন।
তবে ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক পথ জুড়েই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। অন্যদিকে ডিম পাহাড় এলাকায় দাঁড়িয়ে ছোঁয়া যায় আকাশের সাদা মেঘ। সবুজ গাছগাছালিতে ঠাসা পিচ ঢালা আঁকাবাঁকা পথে যেতে যেতে এসব দৃশ্য দেখে ভ্রমণ পিপাসুরা দৃশ্যত স্তব্ধ হয়ে যান।
শ্রাবণের এই ঘন বর্ষায় ডিম পাহাড় এলাকাটি থাকে সাদা মেঘে আচ্ছন্ন। যেন মেঘের ওপরে সড়ক! সেখানে গেলে পর্যটকরা পান আকাশের মেঘ ছোঁয়ার অভিজ্ঞতা! বর্ষায় ভ্রমণে রাস্তার অর্ধেকটাজুড়ে সাদা মেঘ আপনার সঙ্গী হবে বারবার। কাছে এসে যেন দূরে চলে যায় মেঘদল। আবার মেঘদল যেন বলে দেয় এখানে পথ হারালে ফিরে যাওয়া হবে কঠিন!
ডিম পাহাড় এলাকাটি সবুজের চেয়েও সবুজ। পাহাড়ি রাস্তার ধারে ধারে ফুটে আছে নানা রঙের পাহাড়ি ফুল। পর্যটকদের যেন মনে করিয়ে দেয় জাতীয় কবির ‘ছন্দে ছন্দে দুলে আনন্দে আমি বন ফুল গো’ গানের কলি। মেঘের ফাঁকে রোদের ঝিলিক বৃষ্টিভেজা ফুলগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে!
পুরো সড়কপথের সঙ্গে যোগ হয়েছে সবুজ পাহাড় আর আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের ছোট ছোট গ্রাম। এই গ্রাম গুলোতে বাঙ্গালী, ত্রিপুরা, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যাসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বৈচিত্রময় বসবাস। গ্রাম গুলোতে মানুষের জীবনধারা ও তাদের পথচলা বৈচিত্র্যময়। তবে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা একটি ইস্যু।
পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা অভ্যন্তরীণ সড়কের পাশে পৃথক স্হানে স্থাপিত নিরাপত্তা চৌকি সমূহে যাতায়াতকারী পর্যটকসহ যাত্রী বহনকারী যানবাহন গুলোর চালক এবং যাত্রীদের জরুরি মোবাইল নাম্বারসহ ডাটা লিপিবদ্ধ করা হয়।
যাতে করে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়। পর্যটকরা সমস্যায় না পড়েন তার জন্য গাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে। ডিম পাহাড় এখন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক আলীকদমে আসছে। উঁচু নিচু সড়ক হওয়ায় সাবধানে চলাচল করতে হবে।
কক্সবাজার জেলা চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে আলীকদম-থানচি সড়কপথে উপজেলার টপহিল মিরিন্জা পর্যটনকেন্দ্র এবং আলীকদম উপজেলা সড়কের কাছে পর্যটনকেন্দ্র আলী সুড়ঙ্গ দেখার সুযোগ পাবেন। এখন পর্যটকদের ভ্রমণ মৌসুম হওয়াই প্রতিদিনই বিশেষ করে শুক্রবার- শনিবারসহ সরকারি বন্ধের দিন বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটছে আলীকদমে।
এফপি/রাজ