বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড (USARPAC) এর যৌথ অংশগ্রহণে 'এক্সারসাইজ টাইগার লাইটনিং (টিএল)-২০২৫' অনুষ্ঠিত হয়েছে। সপ্তাহব্যাপি সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত মহড়াটি বুধবার সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন- ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, সিলেট এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এ এস এম রিদওয়ানুর রহমান ও ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স, এ্যাম্বাসেডর ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।
অনুষ্ঠানে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, ‘অনুষ্ঠিত মহড়াটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিশীল সহযোগিতার একটি প্রতীক। যা বঙ্গোপসাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা, শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় দুই দেশের লক্ষ্যকে ধারণ করে। এই মহড়ার মাধ্যমে মার্কিন সেনারা বিশ্বে শান্তিরক্ষায় অসাধারণ দক্ষতার জন্য খ্যাত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন। আমাদের দুই মহান দেশের সম্পর্ক গড়ে উঠছে বাংলাদেশি থেকে আমেরিকান, এক একজন মানুষের মাধ্যমে—হাতে হাত ধরে, হৃদয়ে হৃদয় দিয়ে।’
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণে বিশ্বের শীর্ষ ৩ দেশের মধ্যে থাকে এবং মানের দিক থেকে শীর্ষস্থান অধিকার করে, আর এসকল মিশনে আছেন ১৮০০ নারী সেনাসদস্যও।’
'এক্সারসাইজ টাইগার লাইটনিং' নামক এই যৌথ মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি ধারাবাহিক মহড়ার অংশ। বর্তমানে চলছে টাইগার শার্ক যেখানে স্পেশাল ফোর্সের সাথে নৌবাহিনী অংশ নিচ্ছে আর এ বছরের শেষে বিমান বাহিনীর সাথে অনুষ্ঠিত হবে প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল।’
গত ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী এই মহড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা ন্যাশনাল গার্ডের যৌথ অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়।
জালালাবাদ সেনানিবাসের প্যারা কমান্ডো ব্রিগেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়- বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিধান, সন্ত্রাস দমন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মানবিক সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোন বৈশ্বিক হুমকি মোকাবিলায় বদ্ধপরিকর এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য অংশীদারদের সাথে সমবেতভাবে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, কৌশলগত যৌথ আভিযানিক সক্ষমতা উন্নয়ন এবং প্রস্তুতি জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে এক্সারসাইজ টাইগার লাইটনিং-২০২৫ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এই মহড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা ন্যাশনাল গার্ডের ৬৬ জন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্রিগেডের ১০০ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
মহড়ার প্রতিটি ধাপে অংশগ্রহণকারীরা সমন্বয়, প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে নানাবিধ কৌশলগত ও প্রায়োগিক কার্যক্রমে অংশ নেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে এই অনুশীলনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যকে অনুশীলন সফলভাবে সম্পন্ন করার স্বীকৃতিস্বরূপ সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এছাড়াও, স্মারক হিসেবে প্রত্যেককে ইনসিগনিয়া প্রদান করা হয়।
শুরুতে স্বগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ব্রিগেডের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল হাসান। সমাপনী অনুষ্ঠানে সিলেট অঞ্চলের সকল কমান্ডারগণ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, সেনা সদর এবং সিলেট অঞ্চলের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অন্যান্য উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এই অনুশীলন অংশগ্রহণকারী সেনাসদস্যদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে কার্যকরী অবদান রাখবে।
অপারেশন টাইগার লাইটস প্রশিক্ষণের তথ্যচিত্র প্রদর্শন শেষে প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতার কথা জানান ইউএস মেজর উইস্টিসেন ও বাংলাদেশ সেনাবহিনীর মেজর মাহমুদুল হাসান। অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে ফটোসেশন ও পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
এফপি/এমআই