Dhaka, Monday | 28 July 2025
         
English Edition
   
Epaper | Monday | 28 July 2025 | English
লোহাগাড়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ ডাকাতদলের সদস্য আটক
কপোতাক্ষে ভাঙল বাঁশের সাঁকো, বিচ্ছিন্ন মধুসূদনের স্মৃতিবিজড়িত সাগরদাঁড়ি
বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ
চলে গেলেন অফিস সহকারী মাসুমাও, নিহত বেড়ে ৩৫
শিরোনাম:

ভিটামাটি হারিয়ে দিশেহারা মানুষ, গড়াইয়ের গ্রাসে নিঃশেষ হচ্ছে বড়ুরিয়া

প্রকাশ: সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম  (ভিজিটর : ১১)

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বড়ুরিয়া গ্রাম এখন গড়াই নদীর ভয়াবহ ভাঙনের মুখে। নদী ভাঙনের তীব্রতায় গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে মানচিত্র, নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা নিয়েই দিন পার করছেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

স্থানীয় কৃষক জাহাঙ্গীর মন্ডল জানান, ইতিমধ্যে তার ১০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। নদী যেভাবে গ্রাস করে নিচ্ছে জমি আর ঘরবাড়ি, তাতে ভিটামাটিও রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

জুন মাসের শুরুতে শুরু হওয়া ভাঙন এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ফসলের মাঠ, কলা ও পাটক্ষেত, হলুদের জমি—সবকিছু ভেঙে যাচ্ছে একের পর এক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা জিও ব্যাগগুলোও নদীর প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। কেউ কেউ ঘরবাড়ি হারিয়ে ইতোমধ্যে গ্রাম ছেড়েও চলে গেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শৈলকুপা উপজেলায় গড়াই নদীর প্রবাহমান অংশ প্রায় ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে বড়ুরিয়া গ্রামের দেড় কিলোমিটার এলাকায়। এছাড়া কৃষ্ণনগর, গোসাইডাঙ্গা, মাদলা, মাঝদিয়া এবং লাঙ্গলবাধ এলাকাও ভাঙনপ্রবণ।

বড়ুরিয়া গ্রামের ৭০০ পরিবারের মধ্যে বর্তমানে ২০০ পরিবার টিকে আছে। বাকিরা বাধ্য হয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী, এই গ্রামের মোট জমির পরিমাণ ছিল ১৪৫৭ বিঘা। এর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ছিল ১৩১৪ বিঘা এবং খাস জমি ছিল ১৪৩ বিঘা। বর্তমানে জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৫০ বিঘায়।

গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মোল্লা জানান, “১৯৬২ সাল থেকে ভাঙন শুরু হলেও গত ২০ বছরে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।" অন্য বাসিন্দা সুন্দরী খাতুন বলেন, "আমাদের ছিল ৩০ বিঘা জমি, এখন মাত্র ১০ বিঘা টিকে আছে।”

আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গড়াইয়ের ওপারে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গনেশপুর এলাকায় নদী ভাঙে জমি হারালেও, জেগে ওঠা চরগুলোতে স্থানীয়রা চাষ করতে পারছেন না। অভিযোগ রয়েছে, খোকসার বাসিন্দারা ওই জমি দখল করে নিচ্ছেন, কিন্তু শৈলকুপার বাসিন্দাদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

২০১৯ ও ২০২১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠালেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। চলতি বছর থেকে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চার ধাপে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি চলবে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, “বর্ষার শুরুতে অস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ চলছে। প্রকল্প অনুযায়ী জুন ২০২৬ পর্যন্ত এ কাজ চলবে। এরপর স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। তবে চর দখল ও জমি উদ্ধারের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব।”

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, ভাঙনের ফলে জেগে ওঠা চর এলাকায় শৈলকুপার মানুষ যেন চাষাবাদ করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। জরিপ করে সীমানা নির্ধারণের জন্য জরিপ অধিদপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে।

এই অবস্থায় দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, জমি উদ্ধার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। না হলে শৈলকুপার মানচিত্র থেকে একদিন চিরতরে মুছে যাবে বড়ুরিয়া গ্রাম।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝