রাজধানীর গুলশানে একটি অভিজাত বাসায় প্রবেশ করে ভয়ভীতি ও পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সংগঠনের স্থানীয় ও মহানগর কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে।
১৭ জুলাই সকালে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে গুলশানের একটি বাড়িতে প্রবেশ করেন। তারা দাবি করেন, বাড়িটিতে একজন পলাতক আসামি আছেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা পুলিশ সদস্যদেরও সেখানে নিয়ে যান। যদিও কাউকে না পাওয়ায় পুলিশ ফিরে যায়, পরে ওই নেতারা বাড়ির মালিক শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে ভয় দেখিয়ে প্রথমে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করে দুই দফায় বাসায় যান।
তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার রাতে গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন: আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদ, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, ইব্রাহিম হোসেন এবং একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্ত। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রিয়াদ সংগঠনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ইব্রাহিম ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক।
রবিবার ঢাকা সিএমএম আদালতে শুনানি শেষে চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে এবং একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। শুনানির সময় আদালত চত্বরে আসামিদের উদ্দেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় একদল আইনজীবী। কেউ কেউ মারধরেরও চেষ্টা করেন।
ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ বেআইনি কাজ করলে তার দায় সংগঠন নেবে না। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া দেশের সব স্থানীয় ও মহানগর কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।
মামলার বাদী সিদ্দিক আবু জাফর এজাহারে উল্লেখ করেন, ১৭ জুলাই সকালে রিয়াদ ও কাজী গৌরব বাসায় ঢুকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দেন। ১৯ জুলাই ও ২৬ জুলাই আবারও টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে অভিযুক্তরা তার বাসায় আসে এবং হুমকি দেয়।
গ্রেপ্তার হওয়া রিয়াদ নোয়াখালীর একটি গ্রামে পাকা বাড়ি নির্মাণ করছেন। এলাকাবাসীর মতে, পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় হঠাৎ এ ধরনের নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার পরিবার দাবি করেছে, ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন -এর সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ফেসবুকে লেখেন, “এই প্রথম তারা পুলিশের হাতে ধরা খেল। এদের শিকড় অনেক গভীরে।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “এই ছেলেরা পুলিশকে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেছে। পরে তথ্য পাওয়ার পর আমরা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করি।”
সার্বিকভাবে, এই ঘটনায় ছাত্র রাজনীতির আড়ালে সংঘবদ্ধ অপরাধের একটি ভয়ংকর চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, তদন্ত চলছে এবং প্রয়োজনে আরও গ্রেপ্তার হতে পারে।
এফপি/রাজ