যশোরের কেশবপুর উপজেলায় পাটচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার হেক্টর জমি, কিন্তু অর্জন হয়েছে ৬ হাজার ৭০ হেক্টোর জমিতে।
অর্থাৎ নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়েও প্রায় ২০ শতাংশ বেশি জমিতে পাটচাষ হয়েছে। যা গতবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫ হাজার ১ শত হেক্টর। অর্জন হয়েছিলো ৪ হাজার ৫ শত ১৮ হেক্টোর। তবে উৎপাদনের এই সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গভীর দুর্দশার গল্প কারণ টানা বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় অধিকাংশ মাঠের পাট নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে কেটে ফেলা হচ্ছে অপরিপক্ক পাট।
আষাঢ়ের শুরু থেকেই কেশবপুরে টানা বর্ষণ শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বাতাসেও প্রচণ্ড ধাক্কা খায় পাটখেত। ফলে অনেক গাছ ভেঙে পড়ে যায়, মাটিতে নুইয়ে পড়ে এবং জমে থাকা পানিতে পচে যেতে শুরু করে। অনেক জমিতে এখনও পানি জমে আছে, ফলে কৃষকেরা পাট কাটতে পারছেন না। আর যাঁরা কাটছেন, তাঁদের জন্য খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ।
উপজেলার আলতাপোল গ্রামের কৃষক ফতেমা খাতুন বলেন, ‘অনেক আশা করে ২-৩ বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলাম। ধান কাটার পরপরই জমিতে বীজ বপন করি। গাছগুলো ভালো উঠছিল, কিন্তু আষাঢ়ের প্রথম থেকেই টানা বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে গাছ লম্বা হতে পারেনি, এখন পানিতে পড়ে পচে যাচ্ছে। শ্রমিকের খরচও অনেক বেড়েছে। পাট কাটতে চাইলে যারা আসে তারা ৪-৫ গুণ বেশি মজুরি চায়। আমি খুবই শঙ্কিত।’
একই রকম অভিজ্ঞতা জানালেন উপজেলার আটন্ডা গ্রামের কৃষক জামাল সরদার, আমার পাট গাছে যখন আঁশ ধরতে শুরু করছিল, ঠিক তখনই অতিবৃষ্টি শুরু হয়। এখন কিছু গাছ পচে গেছে, কিছু এখনও মাটিতে পড়ে আছে। পানি নামছে না। আমরা কিভাবে পাট কাটব বুঝতে পারছি না। অপরদিকে, যাঁরা উঁচু জমিতে পাট চাষ করেছেন তাঁদের মধ্যে কিছু কৃষকের ভাগ্য ভালো।
আলতাপোল গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমার জমিটা একটু উঁচু, তাই পানি জমেনি। ফলে গাছ ভালো হয়েছে। আর কিছুদির পরে পাট কেটে জাঁক দেবো, তবে খরচ অনেক বেশি। তারপরও আঁশটা ঠিকঠাক রাখতে পারবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর কেশবপুরে পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় পাটক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। মাঠপর্যায়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ চলছে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, যেহেতু পাট একটি অর্থকরী ফসল এবং দেশের অর্থনীতিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তাই সরকারের উচিত প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা। আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা না করলে ভবিষ্যতে তারা পাটচাষে আগ্রহ হারাতে পারেন।
একদিকে উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ হলেও, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কেশবপুরের কৃষকদের মুখে হাসি নেই। মাঠে পড়ে থাকা পচনধরা পাট যেন তাদের স্বপ্ন ভেঙে দেয়। এখন দরকার দ্রুত সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা। তা নাহলে, আগামীদিনে পাটচাষ আরও বড় সংকটে পড়তে পারে।
এফপি/রাজ