প্রযুক্তিনির্ভর শহরের ব্যস্ততা, যানবাহনের কোলাহল, ইমারতের জঞ্জালে যখন প্রকৃতি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে-ঠিক তখনই শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমোহনার বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো যেন হয়ে উঠেছে এক অসামান্য জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল। সন্ধ্যা নামতেই সেখানে দেখা যায় শত শত চড়ুই পাখির কলকাকলি। এই দৃশ্য অনেকের কাছেই বিস্ময়, আবার অনেকের জন্য শান্তির এক প্রাকৃতিক বার্তা।
বাংলাদেশের গ্রাম কিংবা শহর, সবখানেই চড়ুই পাখি একসময় ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘরের চাল, বারান্দা, বৈদ্যুতিক তার-সব জায়গাতেই ছিল এদের অবাধ বিচরণ। ছোট্ট, খুদে এই পাখিরা খুব সহজেই মানুষের সান্নিধ্যে চলে আসে। তবে বিগত এক-দেড় দশকে চড়ুইয়ের সংখ্যা অনেক কমে যায়।
তবে আশার কথা হচ্ছে-শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমোহনায় এখন আবার দেখা যাচ্ছে অসংখ্য চড়ুই পাখি। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে বৈদ্যুতিক পিলার ও তারে দলবদ্ধ হয়ে বসে থাকে এরা। মাঝে মাঝে একসঙ্গে উড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসে। এই দৃশ্য স্থানীয় মানুষজনকে আনন্দ দেয়, অনেকে আবার ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন।
পরিবেশবাদী ও পাখিপ্রেমীদের ধারণা, শহরের কিছু এলাকায় গাছপালা রক্ষা, কম কীটনাশক ব্যবহার এবং বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে তুলনামূলক নিরাপদ পরিবেশ থাকায় চড়ুই আবার আশ্রয় নিচ্ছে। এটি জীববৈচিত্র্য রক্ষার একটি ইতিবাচক দিক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এদের ফিরে আসা মানেই পরিবেশে ভারসাম্য ফিরে আসছে। তাদের উপস্থিতি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং এটি একটি ইকোসিস্টেমের সুস্থতার বার্তা। আমাদের উচিত শহরে ছোট গাছপালা রক্ষা করা, পুরোনো ঘরের ছাদ বা প্রান্তে ছোট বাসা তৈরির ব্যবস্থা রাখা। চড়ুই পাখির মতো ক্ষুদ্র প্রাণীর মাধ্যমে আমরা বড় ধরনের পরিবেশ সংকটের পূর্বাভাসও পেতে পারি।
চড়ুই পাখি কেবল একটি পাখি নয়, এটি আমাদের শৈশবের স্মৃতি, পরিবেশের বার্তা, এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের প্রতীক। আধুনিক শহরে যেখানে প্রকৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে, সেখানে চড়ুই পাখির ফিরে আসা যেন এক সতেজ ভালো দিক।
পরিশেষে বলা যায়, চড়ুই পাখির এই উপস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়-প্রকৃতির যত্ন নিলে প্রকৃতিও আমাদের ভালবাসবে। তাই সময় এসেছে মানুষ ও প্রকৃতির একসাথে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে নেয়া।
এফপি/রাজ