Dhaka, Wednesday | 23 July 2025
         
English Edition
   
Epaper | Wednesday | 23 July 2025 | English
ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৪৪
২৪ তারিখের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
টঙ্গীতে হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
খুলনায় বিষাক্ত মদপানে আরও ২ জনের মৃত্যু
শিরোনাম:

ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল, মানবেতর জীবন হাতিয়ার লক্ষাধিক জেলের

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম  (ভিজিটর : ১০)

বর্ষার জল আর ভরা মৌসুম এই দুই মিলেই জেলেদের জন্য ইলিশ ধরার সুবর্ণ সময়। কিন্তু এবছর ভরা মৌসুমেও ইলিশ মিলছে সামান্যই। চির চেনা ঘাটে নেই হাঁক ডাক। উচ্ছস্বরে গান বাজে না চায়ের দোকানে। নেই বরপ ভাঙ্গার আওয়াজ। সবাই জিমিয়ে আছে। চোখে মূখে হতাশার চাপ। জেলে, শ্রমিক, ব্যাপারী ও আড়ৎদার সবার একই অবস্থা। ভরা মৌসুমে ইলিশ মাছের আকাল চলছে। শুন্য হাতে ফিরে আসছে জেলে নৌকা গুলো। ফলে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়ার লক্ষাধিক জেলে পরিবারকে।

হাতিয়া উপজেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজারের মতো জেলে রয়েছে। যাদের জীবিকা সরাসরি জড়িত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা ও বিক্রির সাথে। এই জেলেদের মধ্যে প্রায় ৮০% ভাগ নির্ভর করে শুধুমাত্র ইলিশের মৌসুমের উপর। অথচ চলতি মৌসুমে জেলেরা বলছেন, মাছ ধরতে গিয়ে প্রতিদিন লোকসানে ফিরতে হচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার সূর্যমূখী ঘাটে গিয়ে দেখাযায়, দক্ষিণ পাশে খাল পাড়ে বসে আছেন করিম মাঝি (৫৮) নামে এক জেলে। কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।মূখের দাড়ি বেয়ে পড়তে থাকে চোখের পানি। করিম মাঝি বলেন, সিজনের শুরুতে দায় দেনা করে নদীতে নামি। যা মাছ পান তা বিক্রি করে তেল খরচও  মিটাতে পারিনা। এজন্য গত চারদিন নদীতে না গিয়ে ঘাটে বেকার বসে আছি। প্রতি সপ্তাহে এনজিও থেকে কিস্তির জন্য লোকজন আসেন। পরিবারের খরচ চলেনা। সমুদ্রে মাছ নেই চুলায় আগুন নেই।

করিম মাঝির মত অনেকে খাল পাড়ে দাঁড়িয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছেন। সবার মুখে হতাশার চাপ।

কথা হয় সূর্যমূখী ঘাটের আব্দুর রব মাঝির সাথে। তিনি জানান, তার ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ৮ জন লোক কাজ করেন। গত দুই মাসে একটাকাও ভাগে পায়নি কেউ। একদিকে নৌকার খরচ অন্যদিকে সংসারের ব্যায় মিঠানো। সব মিলে দু’মাসে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনার মধ্যে পড়ে আছেন।

তিনি আরো জানান, এই ঘাটে স্থানীয় ও বাহিরের মিলে ৫ শতাধিক ট্রলার রয়েছে। সব মিলে ৩০-৪০ টি ট্রলার নদীতে যায়। অন্যরা সবাই ঘাটে বেকার সময় পার করছে। মাছ না থাকাই কেউ এখন নদীতে যায় না।

সূযমূখী মাছ ঘাটের শ্রমিক সর্দার নুরইসলাম জানান, তার অধিনে এই ঘাটে ৮৫ জন শ্রমিক কাজ করে। খালে কোন নৌকা বা ট্রলার এলে তারা টুরকিতে করে সেই মাছ ডাকের বাক্সে এনে দেয়। প্রতিদিন যে টাকা পায় তা ভাগ করে নেই এই ৮৫ জন। এই বছর প্রথম থেকে মাছ নেই নদীতে। প্রতিদিন কাজ শেষে ভাগে ৩০-৪০ টাকা করে পায় শ্রমিকরা। এতে নিজেদের চা নাস্তা হয় না। সংসার চালাতে হয় দেনা করে।

সূর্যমূখী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: ফয়েজুর রহমান নান্টু বলেন, ৯৩ সাল থেকে মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত। এই বছরের মতো এতো কঠিন অবস্থা আর কখনো দেখিনি। মৌসুমের প্রথম থেকে মাছ নেই। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অন্যত্র চলে গেছে।

এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। এসময় জেলেরা পুরোপুরি ভাবে ব্যাস্ত সময় পার করে ইলিশ শিকারে। প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে ব্যাস্ত সময় পার করছে। নিঝুমদ্বীপ, বন্দরটিলা, সুইজের ঘাট, মোক্তারিয়া, দানারদোল, সূর্যমূখী, কাজিরবাজার বাংলাবাজার ও চেয়ারম্যানঘাট সহ দ্বীপের বড় ২০টি ঘাটের ছোট বড় প্রায় ১০ হাজার জেলে নৌকা নদীতে বিচরণ করছে। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো জেলেদের জালে মিলছে না কাংখিত ইলিশ।

প্রতিদিনই শুন্য হাতে ঘাটে ফিরতে হচ্ছে তাদের। মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ফেরিয়ে গেলেও এখনো লাভের মূখ দেখিনি তারা। অন্যদিকে নদীতে যেতে প্রতিদিনই যে ব্যায় হচ্ছে তাতে আর্থিক দেনার পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে পরিবারের দৈনন্দিন ব্যায় মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ঘাট গুলোতে হাঁকডাক নেই, দেখা দিয়েছে নিরব নিস্তব্দতা ও হতাশা।

জেলেরা অভিযোগ করছেন, বরাদ্দকৃত প্রণোদনা ও চাল বিতরণ কার্যক্রমে অনিয়ম রয়েছে। প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছেন সহায়তা থেকে। খাদ্য ও অর্থনৈতিক সহায়তা নিশ্চিত না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান বলেন, ভরা মৌসুমের এই সময় ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসাবে জাটকা নিধন, মা ইলিশ ধরা ছাড়াও ডুবোচর, জলবায়ুর পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও  উপকূলীয় এলাকায় কলকারখানার বর্জ্য নদীতে আসাতে মাছের বিচরণ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। তবে তিনি আশা করছেন মৌসুমের সামনের সময়গুলোতে  আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝