খুবই জরাজীর্ণ অবস্থা রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়নের ১১০নং চরদুর্লভদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। রয়েছে চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি জরাজীর্ণ ভবন। তাও ভেঙে পড়ছে ছাদের ঢালাই। বিদ্যালয়ে মোট তিনটি শ্রেণি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য নেই কোন ব্যবস্থা। অফিস কক্ষও ভেঙে গেছে। বর্তমানে শিক্ষকদের বসার জন্য নেই অফিস কক্ষ। দুইটি কক্ষে হয় পাঠদান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন ৭ জন শিক্ষার্থী ও তিন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা রয়েছেন শ্রেণি কক্ষে। তবে শ্রেণি কক্ষে নেই কোন শিক্ষার্থী। দুই জন শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন।
জানা গেছে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৯ জন। প্রতিদিন স্কুলে আসেন মাত্র ৫ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী। তাও তাদের বাড়ি থেকে ডেকে আনতে হয় বলে জানান বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসিনা খাতুন।
২০০০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করা হয় এবং ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি করা হয়। বিদ্যালয়টি সরকারি হওয়ার আগে শিক্ষকদের গাফিলতি ছিলো বলেন স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মাহাতাব উদ্দিন মন্ডল। তখন থেকে আশপাশের ভালো স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়।
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির জন্য জন্মনিবন্ধন না করা ও বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিকতাকে দায়ী করছেন প্রধান শিক্ষক মাহাতাব উদ্দিন মন্ডল।
একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা হলে তারা জানান, স্কুলে ঠিকমত ক্লাস হয় তবুও বাচ্চারা স্কুলে আসতে চায় না। কেন আসতে চায় না এর কোন সদুত্তর দিতে পারেনি তারা।
বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত সহকারী শিক্ষক রেশমা খাতুনকে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ, চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে আসছি। ছুটি নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে ফোন করে তাকে পাইনি। সহকারী শিক্ষক তুষার পদ্দারকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক তুষার পদ্দার বলেন, আমাকে বলেছেন তিনি আসতে পারবেন না। তিনি ছুটি নিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই।
জানা গেছে অনুপস্থিত অপর সহকারী শিক্ষক আয়েশা সিদ্দিকা প্রায় ১ মাস ধরে স্কুলে যান না। এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন দেওয়া হলে ওই শিক্ষকের বোন পরিচয়ে কথা বলেন এক নারী। ফোনটি তাকে দিতে বলা হলে তিনি বলেন আয়েশা সিদ্দিকা সেখানে নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিদ্যালয়টি নিয়ে আমি খুব যন্ত্রণায় আছি। আগে ওই বিদ্যালয়ে কেউ আসতো না। আমি আসার পরে অনেক বলে কয়ে কোনমত চালু করিয়েছি। শিক্ষকরা নিজেরাও চায় না বিদ্যালয়টা টিকুক। অভিভাবক সমাবেশ করে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই বিদ্যালয়ের দিকে নজর দিলে আমরা খুব উপকৃত হতাম, বললেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম আবু দারদা বলেন, বিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে খোজ খবর দিয়ে সংশ্লিষ্ঠদেও সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এফপি/রাজ