কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার খারাংখালী এলাকায় বন বিভাগের আওতাধীন একটি সরকারি প্রকল্পের নার্সারি থেকে প্রায় ২ লাখ বনজ চারা গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় প্রভাবশালী মুহাম্মদ হোছনের ছেলে জহির মিয়াগং প্রকাশ্যে এই চারা ধ্বংস করলেও বিষয়টি নিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের রহস্যজনক নীরবতা ঘনীভূত করেছে নানা প্রশ্ন। স্থানীয় বন সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি চারা কর্তনের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ তুলেন।
তারা বলেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি বিষয়টি চেপে গেছেন এবং চারা গাছ কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা দায়সারাভাবে নিজে বাঁচার জন্য জিডি করেছেন। এভাবেই সরকারি গাছের চারা ধ্বংসকারীদের বাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, এমনই অভিযোগ সচেতন মহলের। এভাবেই সরকারি বাজেটের কোটি কোটি টাকা বাগান লাগানোর অভিযোগে গিলে খাচ্ছে অসাধু বনকর্তারা।
এদিকে পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষার উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলে বড় পরিসরে বনায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। খারাংখালী এলাকায় রোপণের জন্য প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ বনজ গাছের চারা গজানো হয়। এই গাছগুলো পূর্ণতা পেলে তা শুধু পরিবেশ রক্ষায় নয়, বরং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও স্থানীয় অর্থনীতির জন্যও বড় অবদান রাখত। অথচ সেই সম্ভাবনাগুলো আজ কাটা পড়ে শুকনো গুঁড়িতে পরিণত হয়েছে।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, চারা কাটার ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলছিল, কিন্তু বন বিভাগ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বিষয়টি জেনেও উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেননি।
স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান,তারা দুইজনের কাছ থেকে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে রেঞ্জ কর্মকর্তা রশিদ। তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ। ঘটনার প্রায় ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো গাছের চারা কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেয়নি বনবিভাগ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ লাখখানেক চারা কাটার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা এঘটনায় জিডি করেছি। মামলা না করার বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন, সবসময় নার্সারি পাহারা দিতে পারবে না, মামলা করলে অবশিষ্ট চারাও কেটে ফেলবে, সে ভয়ে মামলা করেননি।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা কেবল বন নিধন নয়, এটি একটি পরিকল্পিত পরিবেশ হত্যার সামিল।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে এখনই সময় এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার।
এফপি/রাজ