রাজধানীর শাঁখারি বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার বিশ্বজিৎ দাস। আজ সেই মর্মান্তিক ঘটনার ১৩ বছর। এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার বাস্তবায়ন হয়নি। সন্তানের বিচার দেখে যেতে না পারার শঙ্কা নিয়ে চোখের জল ফেলে দিন কাটছে বৃদ্ধ মা-বাবার।
২০১২ সালের (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার কিছু পর। রাজধানীর পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার এলাকার একটি দর্জি দোকানে কর্মরত বিশ্বজিৎ দাস সেদিন প্রতিদিনের মতোই বাসা থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। সেদিন রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী অবরোধ চলছিল। অবরোধে বোমা বিস্ফোরণের শব্দে ভীতু প্রকৃতির বিশ্বজিৎ প্রাণভয়ে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
এই সময় ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে ‘শিবির কর্মী’ সন্দেহে আটকে লোহার রড, চাপাতি ও দা দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। রক্তাক্ত অবস্থায় বিশ্বজিৎ পার্শ্ববর্তী একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করলে সেখানেও তাকে টেনে বের করে নির্মমভাবে মারধর করা হয়।
প্রাণ বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে তিনি হামলাকারীদের বারবার বলেন—আমি শিবির না, আমি হিন্দু, প্রয়োজনে প্যান্ট খুলে দেখেন।তবুও তার অনুনয়- বিনয় কেউ শোনেনি। অবশেষে শাঁখারি বাজারের একটি সরু গলিতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বিশ্বজিৎ। ঘটনাটি দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা মামলায় একাধিক আসামির মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কিন্তু রায় কার্যকর হয়নি।
বিশ্বজিৎ দাসের মা কল্পনা রানী এখনো ছেলের নামে কাপড় রেখে দেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “বিশ্ব যদি বাইচা থাকত, আজকে আমাদের এত কষ্টে থাকতে হইত না। তার বিয়ে করামু ভাবছিলাম। বউ আমাদের সেবা করবে—এই ছিল শখ। কিন্তু কিছুই হইল না। ওরা আমার বিশ্বরে মাইরা ফেললো। আমি মরার আগে বিচার দেখতে চাই।
বাবা অনন্ত দাসের চোখে- মুখে গভীর হতাশা। তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে যদি বিচার দেখে যেতে পারতাম, আমার আত্মা শান্তি পাইত। বিশ্বজিতের ভাবী বিউটি দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তখন ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল, এই অভিযোগ তো বারবার শুনেছি। এখন তো সেই সরকার নাই। তাহলে বিচার হইতেছে না কেন?
পড়শি পুতুল দাস বলেন, বিশ্বজিৎ খুব ভালো মানুষ ছিল, সবসময় হাসিমুখে কথা বলত। এত বড় হত্যাকাণ্ডের বিচার ১৩ বছরেও হলো না এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় কষ্ট।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি এড. মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আজ থেকে ১৩ বছর আগে প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করে। কিন্তু তার বিচার এখনও হয়নি। এখন যেহেতু নিরপেক্ষ সরকার দেশ পরিচালনা করছে। তাই আশা করি বিশ্বজিতের পরিবার মৃত্যুর আগে বিচার দেখে যেতে পারবে।
এফপি/জেএস