ভারতের হরিয়ানার গুরগাঁওয়ে এক মর্মান্তিক ঘটনায় জাতীয় পর্যায়ের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদব (২৫)–কে গুলি করে হত্যা করেছেন তাঁর বাবা দীপক যাদব (৫৪)। প্রতিবেশীদের কটূক্তি, সামাজিক সম্মানহানির ভয় ও অর্থনৈতিক নির্ভরতার অপবাদ সইতে না পেরেই তিনি মেয়েকে গুলি করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনা ঘটেছে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে, গুরগাঁওয়ের সুশান্ত লোক-টু এলাকার পারিবারিক বাসভবনে। পুলিশ জানায়, দীপক যাদব নিজের লাইসেন্স করা .৩২ বোরের রিভলবার দিয়ে মেয়ের পিঠ লক্ষ্য করে পাঁচটি গুলি চালান। এর মধ্যে তিনটি গুলি রাধিকাকে বিদ্ধ করে। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
গুরগাঁও পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, দীপক যাদব দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে ভুগছিলেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে মেয়ের উপার্জনে নির্ভরশীল বলে ব্যঙ্গ করতেন। পুলিশ জানায়, দীপককে বারবার শুনতে হত, “ঘর মেয়ের টাকায় চলছে” — এসব মন্তব্যে তিনি ‘অসহ্য অপমান’ বোধ করতেন। একাধিকবার তিনি মেয়েকে টেনিস একাডেমি বন্ধ করতে বলেন, কিন্তু রাধিকা রাজি হননি।
তদন্তে জানা গেছে, রাধিকা সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। খেলাধুলা ও কোচিং সংক্রান্ত ভিডিও বা রিল বানানোয় তাঁর বাবা বিরক্ত ছিলেন। দীপক পুলিশের কাছে দাবি করেন, গ্রামের মানুষ তাঁর মেয়ের ভিডিও নিয়ে অশালীন মন্তব্য করতেন, যা তাঁকে পরিবার ও সমাজের চোখে অপদস্থ করেছিল।
২০০০ সালের ২৩ মার্চ জন্ম নেওয়া রাধিকা যাদব অল ইন্ডিয়া টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (AITA) অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে সিঙ্গেলসে ৩৫তম এবং ডাবলসে ৫৩তম সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিং অর্জন করেছিলেন। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের (ITF) তালিকায় তাঁর ডাবলস র্যাঙ্কিং ছিল ১১৩। দুই বছর আগে চোটের কারণে প্রতিযোগিতামূলক খেলা ছাড়লেও গুরগাঁওয়ে নিজস্ব টেনিস একাডেমি চালাতেন এবং বিভিন্ন ধনী পরিবারের সন্তানদের কোচিং দিতেন।
ঘটনার পর সন্ধ্যায় রাধিকার কোচিংয়ে আসা ছাত্রী ও অভিভাবকদের অনেকে তাঁর বাড়িতে ছুটে আসেন। প্রতিবেশীরা জানান, রাধিকা ছিলেন প্রাণবন্ত, বিনয়ী এবং মেধাবী। তাঁরা জানান, দীপক যাদব সম্প্রতি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন আচরণ করছিলেন। ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পবন যাদব বলেন, “এলাকার কিছু মানুষ রাধিকাকে সহ্য করতে পারত না। ইনস্টাগ্রামে রাধিকার রিল নিয়েও কটূ মন্তব্য করা হত।”
ঘটনার পরপরই গুরগাঁওয়ের সেক্টর-৫৬ থানায় দীপকের বিরুদ্ধে হত্যা ও অস্ত্র আইনে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ তাঁর রিভলবার জব্দ করেছে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। এখনো রাধিকার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনা শুধু এক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের জীবন শেষ করেনি, বরং সমাজের রক্ষণশীলতা, নারী সাফল্যের প্রতি হিংসা এবং মানসিক চাপের ভয়ংকর পরিণতিও সামনে এনেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে এবং দীপকের মানসিক অবস্থাও বিচারাধীন রয়েছে।
এফপি/রাজ