Dhaka, Friday | 18 July 2025
         
English Edition
   
Epaper | Friday | 18 July 2025 | English
ইরাকের শপিং মলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত অন্তত ৫০
আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ
সোনাতলার হরিখালী বাজার মোড় কাদা-পানিতে নিমজ্জিত, জনদুর্ভোগ চরমে
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২ যুবককে কুপিয়ে জখম
শিরোনাম:

বিক্ষোভ দমনে নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

প্রকাশ: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫, ১২:৪০ পিএম আপডেট: ০৯.০৭.২০২৫ ২:৩৮ পিএম  (ভিজিটর : ৩৮)
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশে গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া বিক্ষোভে যেভাবে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানো হয়, তা সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনে হয়েছিল। এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানী ইউনিট ‘বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন’।

বিবিসি আই একটি ফোনালাপের অডিও বিশ্লেষণ করেছে, যাতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “যেখানেই ওদের (বিক্ষোভকারী) পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে”। বুধবার (৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ওই ফোনালাপ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন এবং অনুপস্থিত অবস্থায়ই তার বিচার চলছে। জাতিসংঘের তদন্তকারীদের মতে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে সহিংস ওই বিক্ষোভে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

যদিও হাসিনা ও তার দল সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, অডিওটি “অবৈধ কোনো মনোভাব” প্রমাণ করে না এবং তাদের মতে এটি ছিল “প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া”।

কী আছে ফাঁস হওয়া অডিওতে?

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই তারিখে রেকর্ড হওয়া একটি ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। তিনি বলছেন, “প্রয়োজনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।”

বিবিসির যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে “প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার” করার অনুমতি দিয়েছেন এবং “তারা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবে, তারা গুলি করবে” বলেছেন।

ব্রিটিশ ফরেনসিক অডিও বিশেষজ্ঞ দল ইয়ারশট এবং বাংলাদেশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) অডিওটি পরীক্ষা করে অবিকৃত এবং বিশ্বাসযোগ্য বলে নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অডিওটি বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) রেকর্ড করেছিল। তবে অডিওটি কে ফাঁস করেছে, তা নিশ্চিত নয়।

গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে। পরে তা ব্যাপক আন্দোলনে রূপ নেয়, যার ফলে শেখ হাসিনাকে ১৫ বছরের ক্ষমতা হারাতে হয়।

বিক্ষোভে চূড়ান্ত সহিংসতা ঘটে ৫ আগস্ট। সেদিন ঢাকার গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যান হাসিনা। সেদিন শুধু যাত্রাবাড়ী এলাকায়ই পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিবিসি কী তথ্য সংগ্রহ করেছে?

৩৬ দিনের আন্দোলনের সময়কার শত শত ভিডিও, ছবি, ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি। সিসিটিভি ফুটেজ, ড্রোন ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় তারা দেখিয়েছে, পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়, বিশেষত যেদিন সেনাবাহিনী এলাকা ছেড়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও অন্তত ৩০ মিনিট ধরে পুলিশ গুলি চালায়, এরপর তারা সেনা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। ঘটনার পর ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানান খবর প্রকাশিত হলেও নির্বিচারে হত্যার ঘটনাটি কীভাবে শুরু ও শেষ হয়েছিল এবং তাতে কত মানুষ হতাহত হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিবিসি'র অনুসন্ধানে এমন কিছু তথ্য ও বিবরণ উঠে এসেছে, যা আগে সেভাবে সামনে আসেনি।

আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাহিনীর একজন মুখপাত্র ঘটনা স্বীকার করে বিবিসিকে বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে অপেশাদার আচরণ করেছিলেন।”

বিবিসি আই’র অনুসন্ধান চলাকালে ঘটনার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও বিবিসির হাতে আসে, যেখানে পাঁচ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিবর্ষণ শুরুর কিছু মুহূর্ত দেখা যায়। ভিডিওটি এমন একজন আন্দোলনকারীর মোবাইল ফোন থেকে বিবিসি সংগ্রহ করেছে, যিনি নিজেও সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।

নিহত ওই আন্দোলনকারীর নাম মিরাজ হোসেন। পুলিশ যখন বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে, সেই সময়ের ভিডিও ধারণ করেছেন মিরাজ। মর্মান্তিকভাবে মোবাইল ক্যামেরার ওই ভিডিওতে তার জীবনের শেষ মুহূর্তও ধরা পড়েছে।

মিরাজের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইলটি খুঁজে পান এবং ফোনে সংরক্ষিত ভিডিওটি বিবিসিকে দেন। ভিডিওর মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনাটি শুরু হয়েছিল দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে।

ভিডিওটিতে যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনাবাহিনীর একটি দলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর হঠাৎ করেই তারা ওই এলাকা থেকে সরে যান। এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা ফটকের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারী জনতার ওপর আকস্মিকভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করেন।

থানার উল্টো দিকে অবস্থিত একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ গুলি চালানো শুরু করার পর প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর দিয়ে ছুটে পালাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। ওই সময়ের আরেকটি ভিডিওতে আহতদের শরীরে লাথি মারতেও দেখা যায় পুলিশকে।

অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে, পাঁচ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। ঘটনার সময়ের কিছু ড্রোন ভিডিও বিবিসির হাতে এসেছে।

ভিডিওর মেটাডেটার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিকেল তিনটা ১৭ মিনিটেও যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল পুলিশ। এরপর তাদের বড় একটি দলকে থানার উল্টো পাশে অবস্থিত একটি অস্থায়ী সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

ড্রোন ভিডিওতে মহাসড়কের ওপর হতাহতদের একাধিক মৃতদেহ পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। ভ্যান-রিকশা এবং বাইকে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা।

পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগের দিকে চলে যান। আর যারা তখনও যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন, তাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ একটি অংশ থানায় আগুন দেন। এ ঘটনায় পুলিশের কমপক্ষে ছয়জন সদস্য নিহত হন।

পাঁচ আগস্ট বিকেলে পুলিশের নির্বিচার গুলির ঘটনার পর আহতদেরকে আশপাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা বহু ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৩০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল।

কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তখনকার খবর, নিহতদের পরিবারের সাক্ষাৎকার, হাসপাতালের নথি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টের সত্যতা যাচাই করার পর বিবিসি দেখেছে, পাঁচ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে কমপক্ষে ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন। এর বাইরে সেদিন অন্তত ছয়জন পুলিশ নিহত হন।

মূলত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথনের এই ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, গত গ্রীষ্মে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া এই অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে, তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন।

ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন। 

প্রসঙ্গত, গণহত্যা, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা, উস্কানি ও ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিচার চলছে। তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন এবং ভারত সরকারের কাছে তার প্রত্যার্পণের অনুরোধ জানানো হলেও তারা এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝