কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় এক গৃহবধূকে ধর্ষণ ও তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ধর্ষকসহ মোট পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে, পুলিশ সুপারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ হওয়া নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও এজাহার অনুযায়ী, ২৫ বছর বয়সী ওই নারী ১৫ দিন আগে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত ১১টার দিকে ফজর আলী নামে এক ব্যক্তি তার ঘরে ঢুকে গলায় ছুরি ধরে ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে ফজর আলীকে ধরে গণপিটুনি দেয়। পরে আহত অবস্থায় সে পালিয়ে যায়।
ভিকটিম পরদিন মুরাদনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত কয়েকজন ব্যক্তি ভিকটিমের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নারীটি বিবস্ত্র অবস্থায় অসহায়ভাবে কাঁদছেন এবং আশপাশের লোকজন তাকে ঘিরে আছে। ভিডিওটি ভাইরাল হলে ব্যাপক নিন্দা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিও ধারণ ও ছড়ানোর অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলো- মুরাদনগরের পাঁচকিত্তা বাহেরচর গ্রামের সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিক। প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলীকেও রোববার রাতে সায়েদাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনার পর কুমিল্লার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে অভিযুক্তের নাম ও গ্রামের ঠিকানার পাশাপাশি ভিকটিমকে “একই গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রী” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ১৪(১) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, ধর্ষণের শিকার নারীর নাম, ঠিকানা, পরিচয় বা ছবি কোনো সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। এই আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, “ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া এবং শ্লীলতাহানির ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেখানে ভিকটিমের গোপনীয়তা রক্ষা করার কথা, সেখানে তাদের বিজ্ঞপ্তিতেই পরিচয় ফাঁস হলো কীভাবে।
এফপি/রাজ