সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনের পরিণতি থেকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনসহ আমাদের সকলের শিক্ষা নেওয়ার আছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এসময় তিনি আরো বলেন, দুটি কারণে জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া উচিত।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেটে ‘অর্থসহ আমপারা মুখস্ত প্রতিযোগিতা-২০২৫ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে’ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব মন্তব্য করেন। নুর ফাউন্ডেশনের আয়োজনে নগরে বন্দরবাজার এলাকার কুদরত উল্লাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডা. শফিকুর রহমান।
নুর ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যান মুকতাবিস-উন-নূরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি অধ্যক্ষ মাসউদ খান, সিলেট ইসলামিক সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফজলুর রহমান, আনজুমানে খেদমতে কুরআনের সভাপতি সৈয়দ একরামুল হক, দাওয়াতুল ইসলাম ইউকের প্রাক্তন আমীর হাফিজ শফিকুর রহমান মাদানী, জাতীয় ইমাম সমিতির মহাসচিব শাহ নজরুল ইসলাম, ইক্বরা ইন্টারন্যাশনাল ইউকের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি পূর্ণ আস্তা রয়েছে কী-না এবং তাদের যেহেতু কোনো পরীক্ষা হয়নি; তাই এর আগে পরীক্ষার জন্য আপনারা কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা অন্যান্য নির্বাচন চান কী-না? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'আপনি যথার্থ বলেছেন। প্রথম প্রশ্নটি বলেছেন, ‘আমাদের আস্থা আছে কী-না নির্বাচন কমিশনের উপর।’ আস্থার বিষয়টি তো নির্ভর করে পারফর্মেন্সের উপর। উনারা তো কোনো পারফর্মেন্স-ই শো করেন নাই। আবার ২/১ একটা শো করতে গিয়ে আসলে উল্টাপাল্টা বেটিং হয়ে উইকেট আউট হয়ে গেছে। তো আমরা এটা যথার্থ মনে করি- দুইটা কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা আগে হওয়া উচিত।
একটা হলো- হিউজ পাবলিক সাফারিং হচ্ছে। এখন কোন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চারটা টায়ারের (স্তরের) কোন যায়গায় নাই, শুধু ইউনিয়ন পরিষদে আছে। আবার ইউনিয়ন পরিষদের অনেকে এখন নিজের যায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন না। পুরোপুরি একটি বিশৃংখলা অবস্থা, জাতীয় সরকারের সকল টায়ারে বিরাজমান। তাড়াতাড়ি এটার সমাধান না হলে জনদুর্ভোগ যেটা হচ্ছে এটার দায়িত্ব শুধু সরকারের না রাজনৈতিক দলগুলোরও। এর জন্য আমরা এ ব্যাপারে জোরালো আওয়াজ তুলেছি।
দ্বিতীয় আরেকটা কারণ হল- জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় নির্বাচন হয় তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ যাচাই করতে পারবেন। এই দুইটা করনে আমরা মনে করি আগে আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিৎ।
বিগত প্রধান দুই নির্বাচন কমিশনার গ্রেফতার, বর্তমানে যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব রয়েছেন তাদের জন্য বিষয়টা এলার্মিং (উদ্বেগজনক) কী-না? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তারা যদি সততার সাথে দেশপ্রেম এবং দায়িত্ববোধের দায়িত্ব পালন করেন। তাহলে তাদের গলায় বিদায় হওয়ার লগ্নে পুরুষ মানুষ হওয়ায় সোনার মালা দিতে পারবে না ফুলের মালা দিবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু তারাও যদি ব্যর্থ হয়- তাহলে আল্লাহ না করুক, এই মব আমরা সর্মথন করি না। কিন্তু এখান থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নেওয়ার আছে। আমরা মনে করি মানুসিক ভাবে তাদের মজবুদ (দৃঢ়) থাকা উচিত। কারণ, জনগণ তাদের কাছে অনেক প্রত্যাশা করে।
ইতিপূর্বের নির্বাচন কমিশন আর এবারকার নির্বাচন কমিশন এক জিনিস না। আগের কেয়ারটেকার সরকার আর বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার এক জিনিস না। সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। তারা ইতিহাসের অত্যন্ত সম্মানিত পার্ট (অংশ) হওয়ার একটা বিশাল সুযোগ তাদের সামনে এসেছে। যদি সেই দায়িত্বটা ইনসাফ উপর দাড়িয়ে আদায় করতে পারেন। আমরা তাদের কাছে সেটাই প্রত্যাশা করতে চাইবো। তবে তাদের কাছে আমরা যদি কোনো ব্যর্থতার সামান্য লক্ষণ দেখি, কেউ আওয়াজ করুক না করুক, সব আগে আমরাই প্রতিবাদ করব।
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করেছে- তারিখ এবং দিবসের নাম প্রসঙ্গে জামায়াতের সর্বোচ্চ শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘দেখুন, নাম আমরা দেই নাই। তারা নাম দিয়েছেন। এই নাম নিয়ে আমাদের কোনো টানাটানি নাই। নাম যদি বদলাইয়া আরো ভালো কোনো নাম দেন, ভালো। আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু দিবস হিসেবে কোনটা হওয়া উচিত? অবশ্যই ৫ আগস্ট হওয়া উচিত।’
এফপি/রাজ