গল টেস্ট খেলেই সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তার বিদায়ী ম্যাচে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল শ্রীলঙ্কা। তবে বাংলাদেশের লড়াকু মানসিকতা ও বৃষ্টির বাগড়ায় কোনো দলই জয়ের দেখা পায়নি। শেষ পর্যন্ত দুই দল ড্র নিয়েই মাঠ ছেড়েছে।
টস জিতে আগে ব্যাট করে নিজেদের প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৪৯৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে শ্রীলঙ্কার ইনিংস থামে ৪৮৫ রানে। ১০ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ৬ উইকেটে ২৮৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এরপর শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেট ৭২ রান করলে দুই দলই ড্র মেনে নেয়।
এই ড্রয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর পর গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কোনো টেস্ট ম্যাচ অমীমাংসিত থাকল। ২০১৩ সালে আগের ড্রয়ের ঘটনাটিও ছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচে। এরপর ২৬ ম্যাচ মাঠে গড়ালেও কোনো ম্যাচ অমীমাংসিত ছিল না। এখন পর্যন্ত গলে ৪৫ ম্যাচের মধ্যে কেবল ৭টি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
এই ম্যাচ ড্র হওয়ায়, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্রের শুরুতেই পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। সমান ৪ করে পয়েন্ট এবং শতকরা ৩৩.৩৩ পয়েন্ট নামের পাশে তুলল দু দল। সবশেষ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে সপ্তম স্থানে শেষ করেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ১৮৭ রানে এগিয়ে ছিল টাইগাররা। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ৫৬ ও মুশফিকুর রহিম ২২ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেন।
দিনের শুরুতে ক্যাচ দিয়ে ৬৬ রানে থাকা অবস্থায় বেঁচে যান শান্ত। জীবন পেয়ে মুশফিকের সাথে ১০৯ রানের জুটি গড়েন শান্ত। প্রথম ইনিংসে চতুর্থ উইকেটেই ২৬৪ রান জড়ো করেছিলেন দু’জনে। দলীয় ২৩৭ রানে রান আউটের ফাঁদে পড়ে হাফ-সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় থামেন মুশফিক। ৪টি চারে ৪৯ রান করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রান করেছিলেন মুশফিক।
মুশফিক ফেরার পর বৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর ব্যাট হাতে নেমে দ্রুত ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিটন দাস ৩ ও জাকের আলি ২ রানে আউট হন। জাকের ফেরার সময় ৯৬ রানে দাঁড়িয়ে শান্ত।
এরপর নাইম হাসানকে নিয়ে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত। ৯ চারে ১৯০ বলে সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রান করেছিলেন শান্ত। বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে এক ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে দু’বার এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন শান্ত।
এছাড়াও বিশ্বের ১২তম ব্যাটার হিসেবে দুই টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির নজির গড়েন শান্ত। তবে অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা ১৬তম ব্যাটার তিনি। সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান তুলেছেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ২৮৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এতে জয়ের জন্য ২৯৬ রানের টার্গেট পায় শ্রীলংকা। ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৯৯ বলে ১২৫ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত। নাইম ৭ রানে অপরাজিত থাকেন। থারিন্দু রত্নায়েকে ৩ উইকেট নেন।
২৯৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৩২ রানের সূচনা করে শ্রীলংকা। এরপর ১৬ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় লংকানরা। ষষ্ঠ ওভারে শ্রীলংকার ওপেনার লাহিরু উদারাকে ৯ রানে শিকার করে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট উপহার দেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। পরের ওভারে পাথুম নিশাঙ্কাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান স্পিনার নাইম। ২৪ রান করেন প্রথম ইনিংসে ১৮৭ রান করা নিশাঙ্কা।
৩৪ রানের ২ উইকেট পতনের পর সাবধানে খেলতে শুরু করেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার দিনেশ চান্ডিমাল ও বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ৮১ বল খেলে ১৩ রান যোগ করেন তারা। এ অবস্থায় ১ রানের ব্যবধানে তাইজুলের শিকার হন চান্ডিমাল ও ম্যাথিউস। চান্ডিমাল ৬ ও ম্যাথিউস ৮ রান করেন।
৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে শ্রীলংকা। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে কামিন্দু মেন্ডিস ও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৫৩ বলে ২৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়লে ম্যাচটি ড্র হয়। কামিন্দু ও ডি সিলভা ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন। তাইজুল ২৩ রানে ৩টি ও নাইম ২৯ রানে ১ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন শান্ত।
আগামী ২৫ জুন থেকে কলম্বোতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামবে দুই দল।
এফপি/এমআই