উত্তেজনায় ঠাসা, রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে শেষ পর্যন্ত হারের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ। এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ বাছাই পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ১–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে হাভিয়ের কাবরেরার দল।
জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ২০ মিনিটেই ফাহামিদুল ইসলাম ও শাকিল আহাদ বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেন। কিন্তু ফরোয়ার্ডরা তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।
দুই অর্ধে দুই গোল হজম করে চাপে পড়ে বাংলাদেশ
ম্যাচের ৪৪ মিনিটে সিঙ্গাপুরের মিডফিল্ডার সং উই ইয়াং গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। বাংলাদেশ গোলকিপার মিতুল মার্মা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ব্যর্থ হন, সেই সুযোগে ডান দিক থেকে বল পেয়ে নেয়া শটে জালে বল পাঠান উই ইয়াং।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে এসে ৫৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইকসান ফান্দি। প্রথম শট মিতুল আটকালেও বল ক্লিয়ার করতে না পারায় ফান্দি ফের বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান এবং ঠাণ্ডা মাথায় গোলটি করেন।
হামজা-রাকিব জুটিতে ফিরে আসে আশা
৬৭ মিনিটে বাংলাদেশের হয়ে গোলটি করেন রাকিব হোসেন। মাঝমাঠ থেকে অসাধারণ এক থ্রু পাস বাড়িয়ে দেন হামজা চৌধুরী, যার সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোলকিপারকে পরাস্ত করেন রাকিব। গোলের পর সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।
শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের হয়ে সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল। শাহরিয়ার ইমনের হেড গোলের মুখে যাচ্ছিল, কিন্তু দুর্দান্ত এক সেভে তা ফিরিয়ে দেন সিঙ্গাপুর গোলকিপার। সেখানেই শেষ বাঁশি বাজান রেফারি, ম্যাচ শেষে হতাশায় ডুব দেয় বাংলাদেশ।
শমিত সোম ছিলেন মাঝমাঠের প্রাণ
ম্যাচজুড়ে বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার ছিলেন শমিত সোম। অন্তত পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করেন তিনি, কিন্তু ফরোয়ার্ডরা তা কাজে লাগাতে পারেননি।
চোট ও কার্ড
ম্যাচে দুটি চোট পান ডিফেন্ডার তারিক কাজী। প্রথমে ঠোঁটে আঘাত পেয়ে রক্ত ঝরান, পরে আবারও ধাক্কা খান। ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ডটি দেখেন মিডফিল্ডার ফাহামিদুল ইসলাম, সিঙ্গাপুরের এক খেলোয়াড়ের জার্সি টেনে ধরায় রেফারি তাঁকে সতর্ক করেন।
সমর্থকদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো
ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই স্টেডিয়ামে জড়ো হন হাজারো বাংলাদেশি সমর্থক। ব্যান্ড বাজনা, ফ্লেয়ার জ্বালানো, পতাকা উড়ানোতে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগানে মুখর ছিল পুরো এলাকা।
একাদশে যারা ছিলেন
বাংলাদেশ একাদশে ছিলেন:
মিতুল মার্মা (গোলরক্ষক), তপু বর্মণ (অধিনায়ক), তারিক কাজী, সাদ উদ্দিন, শাকিল আহাদ, হামজা চৌধুরী, শমিত সোম, মোহাম্মদ হৃদয়, ফাহামিদুল ইসলাম, কাজেম শাহ, রাকিব হোসেন।
গ্রুপের অবস্থান
এই হারের ফলে দুই ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তৃতীয় স্থানে আছে। অন্যদিকে, সিঙ্গাপুর ৪ পয়েন্ট নিয়ে উঠে গেছে শীর্ষে।
বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ম্যাচ শেষে বলেন, “খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে আমি গর্বিত। অনেক সুযোগ তৈরি করেছি, গোল করতে পারিনি- সেটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।”
বাংলাদেশের সামনে এখনো সুযোগ আছে কোয়ালিফাই করার। তবে পরের ম্যাচগুলোয় গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে নিখুঁতভাবে- কারণ এই লেভেলে ভুলের সুযোগ নেই।
এফপি/রাজ