Dhaka, Monday | 16 June 2025
         
English Edition
   
Epaper | Monday | 16 June 2025 | English
জয়পুরহাটে দস্যুতা-ছিনতাই মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার
কালিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মোজাহার হোসেন কান্টু গ্রেপ্তার
ঈদের ১৫ দিনে সড়কে ঝরেছে ৩৯০ প্রাণ
ঈদের ছুটি শেষে খুলেছে অফিস-আদালত
শিরোনাম:

বরগুনায় মৃত্যুর মিছিল, ডেঙ্গু থামাতে সেনা মেডিকেল ক্যাম্পের দাবি

প্রকাশ: সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ১:৫০ পিএম  (ভিজিটর : ১১)

দক্ষিণাঞ্চলের শান্ত শহর বরগুনা যেন আজ পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে। প্রতিদিন ভোরবেলা, সূর্যের আলো নয়, ভেসে আসে কান্না, কারও একমাত্র ছেলেটি মারা গেছে, কারও ছোট বোনটি ICU'তে নিঃশ্বাসের সঙ্গে লড়ছে। জ্বর আসে, শরীর ব্যথায় ভেঙে পড়ে। এরপর প্লাটিলেট কমে যায়, নিঃশব্দে থেমে যায় হৃদকম্পন। বরগুনা এখন ডেঙ্গু রেড জোন। কিন্তু জনস্বাস্থ্যব্যবস্থা এই দুঃসময় মোকাবিলায় কার্যত অক্ষম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে জায়গা নেই, ওষুধ নেই, স্যালাইন নেই, আল্লাহর ওপর ভরসা করে ফিরিয়ে আনা হয় রুগীকে!

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা মানবিকভাবে চেষ্টা করছেন। তবে জনবল, সরঞ্জাম, আইসিইউ ও অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতায় তারা চরমভাবে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সেবা মিলছে না প্রত্যাশিতভাবে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের অনেকেই উন্নত চিকিৎসার আশায় ছুটছেন বরিশাল বা ঢাকার দিকে। কিন্তু দূরবর্তী পথে যেতে যেতে, অ্যাম্বুলেন্সেই অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। চিকিৎসার অভাবেই থেমে যাচ্ছে জীবন।

বাস্তব জীবনের সাথে যুদ্ধ করে ভালোবাসার বন্ধুকে হারিয়ে সহপাঠী ও রুমমেট মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, “যদি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকতো তাহলে হয়তো সে আজ বেঁচে থাকতো! বরগুনাবাসীর আকুল আবেদন সেনাবাহিনীর একটি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হোক।”

মেহেদীর কাছের বন্ধু, সহপাঠী ও রুমমেট মো. নাইমুর ইসলাম প্রিন্স (২৬) মাত্র কিছুদিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ছিলো, এখন সে লা-শ হয়ে কবরে।

বন্ধু আরো বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমে বরগুনা, পরে বরিশাল, শেষে ঢাকার কূর্মিটোলা জেনারেল  হাসপাতালের ICU। কিন্তু আর ফেরা হয়নি। শুক্রবার ভোরে, নিঃশব্দে থেমে যায় তার হৃদয়।

প্রিন্স ছোটবেলায় মা হারিয়েছে। বেড়ে উঠেছে নানা-মামার ঘরে। টিউশন করে নিজের খরচ চালিয়ে পড়ালেখা শেষ করেছে। সদ্য মাস্টার্স পাস করেছে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে। অবিবাহিত প্রিন্স এর একটি সম্ভাবনাময় জীবন, একটি স্বপ্নের গল্প ডেঙ্গুর থাবায় স্তব্ধ হয়ে গেল।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে কথা বললে সচেতন মহলের জাকির হোসেন মিরাজ, আবু জাফর সালেহ, মোঃ মুনির চৌধুরী, হোসনে আরা হাসি, অ্যাড. মনিরুল ইসলাম সহ অনেকেই বলেন, প্রিন্সের মতো এমন গল্প দিন দিন বেড়েই চলছে। এই অবস্থায় বরগুনাবাসীর মুখে একটিই কথা। সেনাবাহিনী যদি এই মুহূর্তে একটি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে, তাহলে হাজারো প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে, অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও ম্যান পাওয়ার, নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স, স্পিড বোট, হেলিকপ্টার ও ভ্রাম্যমাণ ইউনিট, জরুরি ওষুধ, স্যালাইন, প্লাটিলেট কিট, সংকট মোকাবেলায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী শৃঙ্খলা। এই ক্যাম্প কেবল চিকিৎসাসেবা নয়, বরগুনার জন্য হবে এক মানবিক আশ্বাস। ডেঙ্গু এখন যুদ্ধ! এবং এই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর মতো বাহিনীর সহায়তা একান্ত প্রয়োজন।

বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. সোহেল হাফিজ বলেন, শেষ কথা হচ্ছে, বরগুনাবাসীর করুন মূহুর্ত কাটাচ্ছে! তবে এই করুন মূহুর্তে বরগুনায় সেনাবাহিনীর মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা জরুরী এটি শুধু বরগুনার কথা নয়, এটি বাংলাদেশেরও এক প্রতিচ্ছবি।

বরগুনা আমাদের দেশেরই একটি শহর। আজ এখানকার ডাক অবহেলা করলে, আগামীকাল অন্য জেলার মানুষও একই পরিণতির শিকার হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, বরগুনাবাসীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে বরগুনায় একটি জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। এটি সময়ের দাবি, মানবতার দায়িত্ব। না হয় মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বেড়েই চলবে! 

ডেঙ্গুর থাবায় নিজের ছোট বোনকে হারিয়ে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী (ভারপ্রাপ্ত) মোসাঃ আসমা আক্তার বলেন, একটি শহর এখন ডুবছে অসুস্থতায় এবং শোকে! কিন্তু ডুবে যাচ্ছে অবহেলায়ও। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুই বছরের বাচ্চা রেখে মারা গেছেন আমার একমাত্র আদরের ছোট বোন মোনালিসা আক্তার জেরিন (৩২), মৃত্যুর পরে তাদের স্মরনে প্রথম দু’দিন ফেসবুক জুড়ে থাকে শোকের আবহ। তারপর সব ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে পরিবার বোন হারিয়েছে এবং সন্তান হারিয়েছে তাদের শোক কি ফেসবুক পোস্টে থামে? 

তিনি আরো বলেন, আমার পরিবারের ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। ছোট বোন মারা যাওয়ার পরে সবাইকে নিয়ে আতঙ্কিত! বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প হলে উপকৃত হবে আমাদের প্রাণের জেলার মানুষ। উপকৃত হবো আমরা। এই শহরের প্রতিটি মৃত্যুই হয়ে উঠছে একেকটি হাহাকারের চিত্র। প্রতিটি পরিবারের কান্না যেন এখন একত্র হয়ে বলছে, একবার আমাদের পাশে দাঁড়ান, আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো সারাজীবন।

বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি। নতুন করে ডক্টর এবং নার্স পেয়েছি হাসপাতালে। কিন্তু তবুও হিমশিম খেতে হচ্ছে।  প্রতিদিন যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এমন ভাবে চলতে থাকলে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলবে। আমাদের এই ক্লান্তি লগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি মেডিকেল ক্যাম্প করে সেবা দিতে এগিয়ে আসে। তাহলে আমরা তাদের সাধুরে গ্রহণ করব। এবং সবাই মিলে একসাথে মৃত্যুর মিছিল কমাতে সক্ষম হবো।

উল্লেখ্য, আজকের বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০৬ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২১৫ জন। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১,৮৩৮ জন। তবে এছাড়াও প্রাইভেট হাসপাতালে বা বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছে কয়েক শতাধিক মানুষ। 

তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ নিয়ে চলতি বছরে জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে মারা গেছেন ৫ জন এবং অন্যান্য হাসপাতালে ৬ জন।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝