কক্সবাজার সদর উপজেলার ডেইলপাড়া এলাকার বাদশা মিয়ার স্ত্রী হাজেরা ৩ সন্তানের জননী। স্বামীসহ পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫ জন। স্বামী বাদশা মিয়া অসুস্থ থাকার কারণে পরিবারে অভাব লেগেই থাকে যার কারণে একটি ভাল স্বাস্থ্যম্মত টয়লেট তৈরি করবেন সেই সামর্থ তার ছিল না।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অধিনে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে তিনি একটি স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট পেয়েছেন। টয়লেটটি সরকার থেকে করে দেওয়ার পর থেকে তাদের অনেকটা জীবন যাত্রা উন্নত হয়েছে ও বাচ্ছাদের অসুখও কম হচ্ছে এমনটা জানালেন হাজেরা।
অন্যদিকে ঈদগাও উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার মৃত নুর আহমদের ছেলে সৈয়দ আলম (৬৫) ৩ সন্তানের জনক। মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন ছেলের জন্য বৌ এনেছেন। এখন তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। সৈয়দ আলম বয়সের ভারে কিছু করতে পারেন না ছেলেরাও বেশি কামাই করতে পারেন বলে আগে খোলা পায়খানা ব্যবহার করতো। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর মাধ্যমে একটি পাকা টয়লেট পাওয়ার কারণে পরিবারে সবাই এখন সেই পাকা টয়লেট ব্যবহারক করতে পারছে।
তার অনুভুতি জানাতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান এবং আবেগপ্রবণ হয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে সৈয়দ আলম বলেন, আমি হয়ত কখনো এমন একটি পাকা টয়লেট করতে পারতাম না। কিন্তু স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর মাধ্যমে এটি পাকা টয়লেট পেয়ে আমি খুশি।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইর্মাজেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রিসপন্স প্রজেক্ট ( ইএমসিআরপি) মাধ্যমে হোস্ট মিউনিটির জন্য কক্সবাজার সদর উপজেলা ও ঈদগাও উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২ হাজার ৪ শত ৩০ পরিবারকে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের আওতায় এসেছে বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১ হাজার ১ শত ৬৫টি টয়লেট ও ঈদগাও উপজেলায় ১ হাজার ২ শত ৬৫টি টয়লেট করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের এই বছরের ঐ ঈদগাও উপজেলাতে ৩৬৫টি ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৩৬৫টি টয়লেটের কাজ এখনো চলমান বলে জানা গেছে।
এছাড়াও কক্সবাজার জেলায় প্রতিটি উপজেলায় এই কার্যক্রম চালু রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে পর্যটন এলাকা কক্সবাজার হওয়ার কারণে কক্সবাজার সদর ও ঈদগাও উপজেলাকে অলাদাভাবে কাজ করে দ্রুত সময়ে কাজ বুঝিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারের কাছ থেকে। এটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কক্সবাজার অফিস থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার ও ঈদগাও উপজেলায় ২০২৩-২০২৪- ও ২৫ অর্থ বছরে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যারা অসহায় ও খোলা টয়লেট ব্যবহার করছে এমন পরিবার চিহিৃত করে ২ হাজার ৪ শত ৩০ পরিবারকে পাকা টয়লেট স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে।
ক্রমান্বয়ে যেসব পরিবার অসহায় টাকার অভাবে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট করতে পারছে না তাদেরও করে দেওয়া হবে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কারণে হোস্ট কমিউনিটির জন্য এইসব টয়লেট বরাদ্দ হয়েছে বলে জানান। কক্সবাজার সদর উপজেলা ও ঈদগাও উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে এই পাকা টয়লেট করা হয়।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আন ম হেলাল উদ্দিন জানান, প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। কোন দরিদ্র ব্যক্তি যদি টয়লেট করতে না পারে তবে এভাবে সরকারের এগিয়ে আসা উচিৎ। খোলা টয়লেট হলে শুধু যাদের আছে তাদের ক্ষতি হচ্ছে এমন নয় আশেপাশে সবার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে। নাগরিক ফোরাম এই কাজকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।
এই টয়লেটের বিশেষ সুবিধার কথা তুলে ধরে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর জানান, এই টয়লটে গুলো এসডিজি ৬ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্প থেকে ড়িজাইন করা হয়েছে। এইটি টুইনপিট টয়লেট। এর সুবিধা হচ্ছে একটি পিট সব সময় বন্ধ থাকবে আরকেটি ব্যবহারে জন্য থাকবে। একটি পিট ভরাট হয়ে গেলে সেটি বন্ধ করে অন্য পিট চালু করা যাবে। বন্ধ পিটের মল কিছুদিনের মধ্যে জৈব সার রূপান্তরিত হবে তখন ব্যবহারকারী নিজেই পরষ্কিার করে খালি করতে পারবে। এইভাবে একটি বন্ধ হলে আরকেটি চালু করে র্দীঘদিন ব্যবহার করা যাবে এই টয়লেট।
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামাণিক জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হোস্ট কমিউনিটির অসহায় দরিদ্র পরিবারের জন্য এসব হাউসহোল্ড টয়লেট বরাদ্দ এসেছে। আমরা যাচাই বাচাই করে যাদের টয়লেট নেই তাদের আগে করে দিচ্ছি। এই প্রকল্পের অধিনে আরো টয়লেট বরাদ্দ আসার জন্য প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। আশা করা যায় কক্সবাজার জেলার কেউ খোলা পায়খানা আর ব্যবহার করবে না।
এফপি/রাজ