দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলির নয়ানগর গ্রামে সাইকেল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে এক স্কুলছাত্রী ও তার মাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) এই ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ওই ছবিতে দেখা গেছে, দুজন নারীকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। এসময় তাদের দুই হাত পেছন দিকে দিয়ে বাঁধা হয়েছে। পাশাাশি কোমড়েও দেওয়া হয়েছে বাঁধ। চারপাশ থেকে উৎসুক জনতা ভিড় করে ঘটনাটি দেখছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার ফারুক হোসেনের বাড়ি থেকে একটি বাইসাইকেল চুরি হয়। পরদিনই সেটি প্রতিবেশী সিদ্দিক হোসেনের বাড়িতে পাওয়া যায়। গ্রামবাসী বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। কিন্তু সাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রোববার চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফারুকের স্ত্রী এলিনা বেগম ও সিদ্দিকের স্ত্রীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে সিদ্দিক তার প্রতিবেশী এলিনাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত অবস্থায় এলিনাকে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
পরদিন সোমবার সকালে ফারুক হোসেন তার শ্যালক ও আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সিদ্দিকের স্ত্রী এবং নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে জোর করে বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং নির্যাতন চালায়।
ঘটনার কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা এসে মা-মেয়েকে মুক্ত করেন। তবে পরে এ ঘটনাযর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সিদ্দিক হোসেনের মা জরিনা বেগম বলেন, আমার ছেলে যদি সাইকেল চুরি করে থাকে, তাহলে তার শাস্তি হোক। কিন্তু তার স্ত্রী আর মেয়েকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করবে এটা কেমন কথা? ওরা তো কোনো অপরাধ করেনি। আমি এর বিচার চাই।
প্রতিবেশী নাজমা বলেন, সিদ্দিক যদি চোর হয়, তার শাস্তি হোক। কিন্তু সেই কারণে তার স্ত্রী ও মেয়েকে এমনভাবে অপমান ও নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। তার ওপর সেই ছবি আবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে –এটা আরও ভয়ংকর ব্যাপার।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ফারুক হোসেনের স্ত্রী এলিনা বেগম বলেন, আমার ছেলের বাইসাইকেল সিদ্দিকের বাড়িতে পাওয়া যায় এবং মীমাংসাও হয়। কিন্তু এরপর সিদ্দিক আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তখন আমার ভাইরা এসে সিদ্দিকের স্ত্রী ও মেয়েকে ধরে খুঁটিতে বেঁধে রাখে কিছুক্ষণ। পরে গ্রামের লোকজন এসে ওদের ছেড়ে দেয়।
স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ঘটনাটি আমি লোকমুখে শুনেছি। ঘটনা যেমনই হোক না কেন, দেশে আইন আছে। কাউকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করা আইনসিদ্ধ নয়।
হাকিমপুর (হিলি) থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, নয়ানগর গ্রামে সাইকেল চুরি, মারামারি এবং একজন নারী ও স্কুলছাত্রীকে খুঁটিতে বেঁধে রাখার ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় অভিযোগ করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফপি/এমআই