ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে পড়েছে, ফলে চরম সংকটে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। গত ৮ মে সর্বশেষ ৮৪টি ভারতীয় ট্রাকে এক হাজার টনের বেশি কয়লা আমদানি হওয়ার পর থেকে এ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বন্দরে মজুত কয়লা বিক্রির হারও অত্যন্ত কম, কারণ ইটভাটাগুলোর অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে।
ভারতের কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত সড়কের বিভিন্ন অংশে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে, যা কয়লা পরিবহনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির আগে কয়লা আমদানি-রফতানির সম্ভাবনা নেই। ফলে বন্দরের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
কয়লা আমদানি বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন শত শত শ্রমিক। কড়ইতলী স্থলবন্দরের শ্রমিক আরশেদুল মিয়া বলেন, “বন্দরের আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় কয়েকদিন ধরে বন্দরে সুনসান নীরবতা চলছে। কাজ না পেয়ে বেকার সময় কাটাচ্ছি।” আরেক শ্রমিক নজিবুল্লাহ জানান, “বন্দরে কয়লার কাজ করেই পরিবারের ভরণপোষণ করতে হয়। কিন্তু ঈদের আগে বন্দরে কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।”
স্থলবন্দর সচল রাখতে ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানির দিকে ঝুঁকছেন। কড়ইতলী-গোবরাকুড়া আমদানি-রফতানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার অপু জানান, “শুধুমাত্র কয়লা আমদানির মাধ্যমে সারা বছর দুই স্থলবন্দর সচল রাখা সম্ভব নয়। আমরা চাই, সারা বছর স্থলবন্দর সচল থাকুক। সেজন্য আবারও পাথর আমদানি করবো।” তিনি আরও বলেন, “আমদানির পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়ে আমাদের পণ্য ভারতে রফতানিও করতে চাচ্ছি। আমাদের ময়মনসিংহে প্রচুর পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়। বিভিন্ন ধরনের মাছ ভারতে রফতানি করতে পারলে আমদানি-রফতানি সারা বছর সচল থাকার পাশাপাশি দুই স্থলবন্দরে ব্যবসা জমজমাট থাকতো।”
কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক পার্থ ঘোষ বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমদানির পাশাপাশি রফতানিমুখী হতে বলেছেন। ঈদের পর পাথর আমদানি শুরু করতে পারলে বন্দরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে।” তিনি আরও জানান, “ভারতীয়রা আগ্রহ দেখালে আমাদের স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা আলোচনার মাধ্যমে কাগজপত্র ঠিক করে মাছ রফতানি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সরকারের আরও বেশি রাজস্ব আদায় হবে।”
হালুয়াঘাটের কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় অর্থনীতি ও শ্রমজীবী মানুষের জীবিকা চরম সংকটে পড়েছে। পাথর আমদানি ও মাছ রফতানির মাধ্যমে বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখার উদ্যোগ নেওয়া হলেও, তা কার্যকর হতে সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
এফপি/রাজ