কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও কুপ্রস্তাব দেওয়ার প্রতিবাদে অভিযুক্ত চৌরঙ্গী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য শেখ রেজাউল করিম মিলনের শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন কয়েক শত অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
রোববার ( ১৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিদ্যালয়ের চত্বরে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন অনু্ষ্ঠিত হয়। এরপর দুপুর একটা পর্যন্ত কুমারখালী- পান্টি সড়ক অবরোধ করে চৌরঙ্গী বাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেন তারা। এতে চরম যানযট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। পরে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বিচারের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ তুলে দেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে আসেননি প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা। সেখানে ক্লাস বাদ দিয়ে যোগ দেন বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা। এরপর বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে চৌরঙ্গী বাজারের চৌরাস্তা মোড়ে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। সপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় সড়কের দুই দিকে দীর্ঘদিন যানযট সৃষ্টি হয়।
এ সময় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষক মিলন অশ্লীল আচরণ করেছেন। এর আগেও অনেকের সঙ্গে এমন খারাপ করেছেন স্যার। তবে কেউ সাহস করে মুখ খোলেনি। আমরাও ভয়ে আছি। প্রধান শিক্ষকের শাস্তি চাই। তার ভাষ্য, অন্যান্য শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের পক্ষে বলার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়েছে। মানববন্ধনে না আসার জন্য তাদের কক্ষে তালা লাগিয়ে রেখেছিল।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অভিযোগ করে বলে, প্রধান শিক্ষকের দ্রুত অপসারণ করে বিদ্যালয়ের সু্ষ্ঠ পরিবেশ ফেরানোর দাবি তার।
চৌরঙ্গী এলাকার মৃত মানিক আলীর ছেলে আইয়ুব আলী বলেন, শিক্ষক মিলনের বিরুদ্ধে পূর্বে এমন অনেক অভিযোগ আছে। কেউ প্রকাশ করার সাহস পায়নি। এবার যেহেতু প্রকাশ হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষককে বহিস্কার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, প্রধান শিক্ষক শেখ রেজাউল করিম মিলনের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানিসহ নানান অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তবুও প্রশাসন লম্পট শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনা। তাই অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
জানা গেছে, ১২ মে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ষষ্ট শ্রেণিতে ইংরেজি ক্লাস চলছিল। সেসময় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক উম্মত আলী উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে ওই ছাত্রীকে লাইব্রেরিতে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে রেখে আসে। এরপর প্রধান শিক্ষক তার ছাত্রীকে মোবাইল কিনে দেওয়া এবং উপবৃত্তির কথা বলে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি করেন। এ ঘটনায় ১৫ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেন ওই ছাত্রীর মা।
ছাত্রীর চাচা বলেন, প্রধান শিক্ষক মিলন আমার ভাতিজির সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে। বিচারের জন্য লিখিত অভিযোগ করেছি। অভিযোগের পর থেকেই শিক্ষক হুমকি ধামকি দিচ্ছে। সঠিক বিচার চাই আমরা।
ঘটনার শিকার ওই ছাত্রী বলে, উপবৃত্তির কথা বলে উম্মত স্যার ডেকে নিয়ে যায়। আর মিলন স্যার খারাপ কিছু করেছে। ভয়ে স্কুলে যাচ্ছি না এই কয়দিন। আমি বিচার চাই। তার ভাষ্য, অনেক মেয়ের সঙ্গেই ওই স্যার এমন আচরণ করেছে।
বিদ্যালয়ে গিয়েও প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম মিলনকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ওয়াছেল আলী বলেন, শুনেছি প্রধান শিক্ষক এক ছাত্রীর সঙ্গে খারাপ কিছু করেছে। যদি সঠিক হয়, তাহলে তদন্ত করে বিচার হওয়া উচিৎ।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল ( সোমবার) তদন্তে যাওয়া হবে।
সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা সড়ক ছেড়ে দেন বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফপি/রাজ