পড়ালেখা করলেই চাকরির পিছনে ছুটতে হবে বা চাকরি করতে হবে এটা ঠিক না। প্রবল ইচ্ছা শক্তি, মেধা ও দৃঢ় সংকল্প থাকলে যেকোন ক্ষেত্রে পরিশ্রম করে স্ববলম্বী হওয়া সম্ভব। এমনটাই প্রমান করেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার পশ্চিম লাভা গ্রামের হারেজ আলীর ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) পাস করা শামীম আহমেদ।
তবে চাকরির পিছনে না ছুটলেও একজন উদ্যোক্তা হওয়ার নেশায় ও নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ২০২০ সালে গাজীপুর থেকে ১০ হাজার টাকায় ১৫০টি টাইগার মুরগির বাচ্চা এনে লালন-পালন শুরু করেন। এরপরে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বছর ঘুরতেই ‘বন্ধন এগ্রো’ নামে টাইগার মুরগির একটি খামার গড়ে তোলেন শামীম। সে এখন ৩টি খামারের মালিক। তার খামারে সপ্তাহে ৬০০ থেকে ৭০০টি ডিম উৎপাদন হয়। তথ্য মতে, তার খামার থেকে মাসে প্রায় ৩ হাজার ডিম উৎপাদন হয়।
নিজের তৈরি ইনকিউভেটর দিয়ে তার উৎপাদিত ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার খামারীদের কাছে এবং শৌখিন মুরগী পালনকারীদের কাছে বিক্রি করেন। ২-৪ দিনের বাচ্চা প্রতিটি ৭৫ টাকা করেন বিক্রি করেন তিনি। তবে বাচ্চা ঝুঁকি মুক্ত হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে বিক্রি করলে প্রতিটি বাচ্চা ৯৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এ হিসেব মতে শামীমের ৩টি খামার থেকে বছরে গড় আয় হচ্ছে ২৭ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা। যা বৈধ পথে চাকরির মাধ্যমেতো দূরের কথা উপজেলা পর্যায়ে কোন কিছুতেই সম্ভব নয়।
প্রবল ইচ্ছা শক্তি, মেধা ও দৃঢ় সংকল্পকে কাজে লাগিয়েই আজ সে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সর্বমহলে পরিচিতি পেয়েছেন। হয়েছেন আত্মনির্ভশীল, পরিণত হয়েছেন চাকরি দাতা হিসেবে। তিনি প্রমান করেছেন উচ্চ শিক্ষিত হলেই চাকরির পিছনে দৌঁড়াতে হবে তা ঠিক না। সে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে এখন সর্বজন পরিচিত। শামীমের খামারে ৭ কেজি থেকে ৮ কেজি ওজনের মুরগি রয়েছে। শামীমের দেখাদেখি এলাকার অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবনারী টাইগার মুরগী পালনে আগ্রহী হয়েছেন।
শামীম বলেন, আমি প্রথমে মাংসের জন্য মুরগি পালন শুরু করি। তাতে লাভবান হলেও তুলনা মূলক কম ছিলো। এরপর ইউটিউব দেখে আগ্রহী হয়ে টাইগার মুরগি পালন করে ডিম উৎপাদন শুরু করি। এই মুরগি থেকে প্রায় দুই বছরের মতো ডিম পাওয়া যায়। তাছাড়া নিজেই তৈরি করি ইনকিউবেটর দিয়ে ২১ দিনের মধ্যে ডিম থেকে নিরোগ বাচ্চা উৎপাদন হয়। মুরগি ডিম দেওয়া বন্ধ করে দিলে মাংসের জন্য বাজারে বিক্রি করে দেই। ন্যায্য দামে বিক্রি করায় আমার মুরগির চাহিদাও বেশি থাকে।
স্থানীয় শিক্ষিত যুবক হাসান মিয়া জানান, শামীমের সফলতা দেখে তিনিও টাইগার মুরগীর খামার করার আগ্রহী হয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যেই ছোট পরিসরে টাইগার মুরগীর খামার করবেন। এটি অপ্রচলিত মুরগী হওয়ায় লালন-পালন পদ্ধতি শিখা জরুরি। তাই লালন-পালন পদ্ধতি শিখতে ও বিভিন্ন পরামর্শ নিতে মাঝে মধ্যেই শামীমের কাছে আসেন তিনি। তিনি বলেন, ‘শামীম ভাইয়ের কাছে শুনেছি, এই মুরগির রোগ বালাই কম হয়, ফলে ঝুঁকিও কম। তাই আমিও টাইগার মুরগির খামার স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম জানান, চাকরির পিছনে না ছুটে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যকে চাকরি দেওয়ার প্রত্যয়ে শামীমের টাইগার মুরগি লালন-পালন করার উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। মুরগির ডিম উৎপাদন থেকে শুরু করে বাচ্চা ফুটানো, পরিচর্যা ও বিক্রি করা সবকিছু শামীম নিজেই করেন। তিনি টাইগার মুরগি লালন-পালনের কাজটি চমৎকার ভাবে নিজে থেকেই শিখে গেছেন। তবে, খামার সংশ্লিষ্ট যেকোন প্রয়োজনে আমাদের কাছে পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চাইলে তাকে দেওয়া হবে বলে জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
এফপি/রাজ