Dhaka, Thursday | 8 May 2025
         
English Edition
   
Epaper | Thursday | 8 May 2025 | English
সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন: চীনা রাষ্ট্রদূত
জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা বিভক্ত, দ্বিধান্বিত: মাহফুজ আলম
ক্ষণজন্মা রফিকুল বারী চৌধুরী—বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক অনন্য নক্ষত্র
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আজ
শিরোনাম:

খুলনায় এলজিইডির নদী খননে লুটপাট

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫, ৩:০৭ পিএম  (ভিজিটর : ১০৩)

খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের কৈলাশগঞ্জের চড়া নদী খননের নামে প্রকল্পের টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে কৈলাশগঞ্জ এলজিইডি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি কর্তৃক চড়া নদী খননের কাজের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। লোক দেখানোর জন্য দায়সারা ভাবে খনন কাজ চলছে। নদী খননের নামে তিন শতাধিক গাছ কেটে সাবাড় করেছে ঠিকাদার।

এ বিষয়ে কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রামবাসী খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না।

অভিযোগ উঠেছে, নদীর অধিকাংশ স্থানে তলদেশে খনন না করে শুধু পাড়ের গাছ কেটে বিল তুলে নেওয়া হচ্ছে। মূলত ঠিকাদার ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই প্রকল্পের টাকা লুটপাট হচ্ছে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ, তবে কাজের কাজ হয়নি কিছুই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খালের এক ধারের পিচের রাস্তার অর্ধেক, অপর পাড়ের ইট সোলিং রাস্তার পুরোটাই বন্ধ করে ফেলা হয়েছে মাটি তুলে। যেখানে খননের কাজ করার কথা তা ঠিক মতো হচ্ছে না। ভেকু মেশিনে খালের মাটি কেটে কোথাও পাড়ে আবার কোথাও খালের ভেতরেই ফেলে রাখা হয়েছে। পাড় ভেঙে আবার ননীতে পড়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় প্রমত্তা নদী ছিল চড়া। সুন্দরবন থেকে শুরু হয়ে ১৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাজুয়ায় গিয়ে মিলেছিল এই নদী। পরে নদীতে বাঁধ হওয়ায় তা মরে খালে পরিণত হয়। আর এখন ঠিকাদার ও এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার মিলে খননের নামে একে ড্রেন বানানোর ষড়যন্ত্র করছে। কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের কৈলাশগঞ্জ গ্রামের পশ্চিমপাড়া ও রামনগর ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝ দিয়ে চড়া নদী প্রবাহিত। বিগত দিনে আমরা দেখেছি এলজিইডি নামে ঘোলের খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির নামে তৎকালীন আওয়ামী লীগের দুর্নীতিগ্রস্ত অসাধু সদস্য দিয়ে গোপনে কমিটি বানিয়ে খাল খননের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। কাউকে তখন কোনো হিসাব দেওয়া লাগেনি। মাটি কাটার নামে তকতা, মই দিয়ে হেচা টেনে খাল খনন দেখিয়েছে। খাল খননের নামে নদীর দুই তীরের সব গাছ পালা কেটে গোটা এলাকা মরুভূমিতে পরিণত করেছিল। নদীর মাটি নদীতেই পড়ে ছিল। খাল খননের নামে সরকারি কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিয়েছিল। তখন প্রতিবাদ করার মতো কেউ ছিল না। তারপরও যারা ওই সময় প্রতিবাদ করেছিল তাদের এলাকা ছাড়া করা ও জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানেও সেই প্রকল্পের নামে চড়া নদীর সব পানি শুকিয়ে দুই তীরের কয়েক হাজার একর তরমুজের ভরা মৌসুমে কৃষকের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে এ সরকারি টাকা লুটতরাজকারী চক্র।

আওয়ামী লীগের কব্জায় নদী খনন প্রকল্প

২০১৫ সালে গঠিত হরিণটানা ঘোলেরখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে আওয়ামী লীগের হরিলুট করা পকেট কমিটি। এই কমিটির সভাপতি তপন কুমার মন্ডল, তিনি কৈলাশগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন ও সাধারণ সম্পাদক শংকর পাইক, তিনি ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পদে রয়েছেন। উভয়ের ভাই-বোন আত্নীয় স্বজন সকলকেই এই কমিটিতে রেখেছেন। এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী বর্তমানে পলাতক চেয়ারম্যানের অনুসারী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পান এলাকাবাসী। তারপর ইউনিয়নের জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ ভাবে অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখত অভিযোগ জমা দেন। কিন্তু সরেজমিনে এলাকাবাসী দাকোপ উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারিং এর তৎপরতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের প্রতিষ্ঠায় মোটা অংকের অর্থিক সুবিধা গ্রহণ করার মাধ্যমে ছলচাতুরি করে যাচ্ছেন।

জনসাধারণ উল্লেখ করে বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা গাঢাকা ও পালিয়ে গেলেও তার দোসররা প্রতিটি সেক্টরে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, তার বাস্তব উদাহরন এটি।

গাছ কেটে সাবাড়

চড়া নদী বাঁচানোর নামে ইতিমধ্যে তিন শতাধিক গাছ কেটে সাবাড় করেছে ঠিকাদার। এসব গাছ বহু বছর ধরে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ছোট-বড় দুর্যোগে প্রাচীর হিসেবে লোকালয়কে রক্ষা করে আসছে। সেসব গাছ কেটে উপকূলের মানুষকে বড় ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবেশবাদী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।

যেখানকার মাটি সেখানেই

চড়া নদী খনন না করেই অর্থ লোপাট করা হচ্ছে। যেখানকার মাটি রয়েছে সেখানেই। খনন হচ্ছে না নদী। বালু ও পলি কেটে রাস্তার উপর রাখা হচ্ছে। যা আবার ভেঙে নদীতেই চলে যাচ্ছে। রাস্তা থেকে মাটি এলাকার লোকজন কেউ কেউ বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অমিত মন্ডল, আগে খালের দুই পাড় সবুজে ছাওয়া ছিল। এখন মরুভূমি হয়ে গেছে। তিনশ’র বেশি গাছ মারা পড়েছে। যার মধ্যে গেওয়া, শিরিস, বাবলা, সজনে, নিম, বরই, কলা, পেপে আছে। গাছের ক্ষতি করতে নিষেধ করা হলেও তারা কারো কথা কানে তুলছে না।

রামনগর গ্রামের কৃষক রামমোহন মন্ডল অভিযোগ করেন, তরমুজের জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চলের সব কৃষক চাষের জন্য খালের পানি ব্যবহার করতাম। হঠাৎ একদিন আমাদের বলা হলো, যার যার পানি লাগবে নিয়ে নাও। আমরা খাল শুকায়ে মাটি কাটবো। এরপর ডিপের পানি কিনে চাষ করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেল।

খাল সংলগ্ন ১ নং ওর্য়াডের মেম্বার ফয়সাল আলম অভিযোগ করেন, হঠাৎ একদিন ভেকু মেশিন এনে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। হরিণটানা ঘোলের খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড কাজটি পেয়েছে। কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী তাদেরকে কাজ দিলেন, কতো টাকার কাজ, কতো দিনে সম্পন্ন হবে, কিভাবে কাজ হবে সে সম্পর্কে আমরা কেউই অবগত না। ভেকু মেশিনে খালের মাটি কেটে কোথাও পাড়ে আবার কোথাও খালের ভেতরেই ফেলে রাখা হয়েছে। পাহাড় সমান মাটির স্তুপের নিচে ঢাকা পড়েছে কৈলাশগঞ্জ পশ্চিম পাড়া পিচের রাস্তার প্রায় অর্ধেক, আর ১ নং ওয়ার্ড দশ ঘরের ইট সোলিং রাস্তা পুরোটাই। খালের তলদেশ চার ফুট করে খনন করার কথা থাকলেও এক থেকে দেড় ফুটের বেশি খোড়া হচ্ছেনা কোথাও। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, খালের পাড়ের অন্তত তিন শতাধিক নানা প্রজাতির গাছ ইতিমধ্যে কেটে বা ভেকু মেশিন দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। কিছু গাছ মাটি চাপা পড়ে মৃতপ্রায়।

হরিণটানা ঘোলের খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শংকর পাইক দাবি করেন, তরমুজ চাষীদের স্বার্থে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে খাল খনন প্রকল্প নিয়েছে এলজিইডি। ৮২ লাখ টাকা বাজেটের এই কাজের মেয়াদ তিন মাস ছিলো। কাজ করতে গিয়ে কিছু গাছ কাটা পড়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। আর খালের মাটি ফেলার কারণে পিচের রাস্তা ও ইট সোলিং রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলেও তারা দ্রুত সব মাটি সরিয়ে ফেলবেন। তবে মেয়াদ শেষেও কেন কাজ শেষ হলো না, এমন প্রশ্নের উওর দেননি তিনি।

খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, চড়া নদী খননের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যেটা আমরা দ্রুতই সমাধানের চেষ্টা করবো। অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। 

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝