জামালপুরের মাদারগঞ্জে বসবাস উপযোগী পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বাবুইপাখি ও তার বাসা। এক যুগ আগেও মাদারগঞ্জ উপজেলার সব জায়গায় চোখে পড়ত এ পাখি। কিন্তু এখন সারিবদ্ধ তালগাছ অথবা নারিকেল পাতায় ঝুলতে দেখা যায় না তাদের শৈল্পিক বাসা। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাবুই পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে।
জানা যায়, নিপুণ শিল্পকর্মে দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখি বিখ্যাত। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। নলখাগড়া ও হোগলা পাতা দিয়ে বাবুই বাসা বুনে থাকে। সেই বাসা যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মজবুত। শক্ত বুননের এই বাসা সহজে ছেঁড়া যায় না। অনেকে বাবুই পাখিকে তাঁতি পাখিও বলেন।
বাবুই পাখি সাধারণত গ্রামের নারকেল, খেজুর, রেইনট্রি, আখ খেতে,সুপারি গাছ এবং বিশেষ করে তাল গাছে দল বেঁধে বাসা বোনে। এরা সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু ও রেণু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে।
বাবুইপাখি বিলুপ্তি হওয়ায় কোথাও যদি কারো নজরে পড়ে স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি উঠতে ভুল করেন না। সাথে ফেসবুকে আপলোডও করেন। পেশায় প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে আপলোড করে লিখেন ছোট বেলায় প্রায় সবখানেই বাবুই পাখি ও তার বাসা দেখা যেত। এখন আর নজরে পড়ে না। কাজের প্রয়োজনে পাটাদহ এলাকায় গিয়ে একটি নারিকেল গাছে বাসাটি নজরে পড়ে। তাই স্মৃতি হিসেবে রাখতে ছবি উঠতে ভুল করিনি।
পরিবেশকর্মী জাহিদুর রহমান উজ্জল বলেন, শিল্পী পাখি বলে পরিচিত বাবুই পাখি পরিবেশের জন্য উপকারী পাখি ছিল। ক্রমে ক্রমে তা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই পাখি বিলুপ্তির প্রধান কারণ তাল, নারিকেল,খেজুর গাছ কমে যাওয়া, নির্বিচারে এই সব বৃক্ষ নিধনের ফলে বাবুই পাখি বসবাসের জন্য বাসা তৈরী করতে পারে না। এ ছাড়া পাখি প্রধান খাদ্য পোকামাকড় ও ফসলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকে ব্যবহারে অনেক পাখি মারা যাচ্ছে। পরিবেশের জন্য এই পাখি রক্ষা করা জরুরী বলে মনে করি।
মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিজভী আহমেদ বলেন, সারা দেশে নির্ধারিত কিছু স্থানে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলেও গ্রামাঞ্চলে বাবুই পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণী নানাবিধ সংকটের কারণে বিলুপ্তির পথে। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতাই পারে এদের রক্ষা করতে।
প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা, প্রকৃতির বাস্তুসংস্থান (ইকো সিস্টেম) ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ও পরিবেশ দূষণের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি আজ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।
এফপি/রাজ