চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে রাজীব জাফর চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করে দলে শুরু হয়েছে প্রবল আলোচনা-সমালোচনা।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন- আওয়ামী লীগের ঘর থেকে উঠে আসা একজন ব্যক্তি কীভাবে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বে জায়গা পেলেন? অনেকের দাবি, রাজীবের পিতা জাফর আহমদ চৌধুরী ছিলেন একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা, আর মা হাসিনা জাফর বর্তমানে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য। এই পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়কে ঘিরেই উঠছে নানা বিতর্ক। অনেকের মতে, এটি আদর্শগত বিচ্যুতি এবং দলের প্রতি নিবেদিত নেতাকর্মীদের চরম অবমূল্যায়ন।
স্থানীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজীবের বিএনপিতে তেমন কোনো রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নজির নেই। দলের আন্দোলন, সভা-সমাবেশ কিংবা মাঠের রাজনীতিতে তাকে কখনো দেখা যায়নি।
আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রাহী বলেন, ‘রাজীবকে জানুয়ারি ২০২৫ সালের আগে কেউ চিনতো না। তিনি কোনো আন্দোলন, মিছিল, বৈঠকে ছিলেন না। তার মা এখনো আওয়ামী লীগের নেত্রী। এমন একজন হঠাৎ করে আমাদের নেতা হয়ে গেলেন—এটা দলের সঙ্গে উপহাস।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি করতে চাইলে করুক, কিন্তু আমাদের ঘাড়ে চড়ে নয়। যারা বছরের পর বছর রাজপথে থেকেছে, মামলা-হামলা খেয়েছে- তাদের বাদ দিয়ে হঠাৎ কাউকে বসিয়ে দেওয়া মানে দলের মনোবলে আঘাত হানা।’
দলের একাংশ মনে করছে, রাজীবের এ অন্তর্ভুক্তি আদর্শের চেয়ে বেশি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, সাবেক মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মীর নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর হেলালের সুপারিশে রাজীব কমিটিতে স্থান পান। ফলে অনেকেই তাকে ‘সুবিধাভোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের মতে, রাজীবের এই পদপ্রাপ্তি রাজনৈতিক প্রতিদান বা বোঝাপড়ার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তাদের ভাষায়, ‘দল যদি পেশাদার রাজনীতি বা ত্যাগ-সংগ্রামের মূল্যায়ন না করে শুধু সুপারিশ বা পারিবারিক পরিচয়ের ভিত্তিতে পদ দেয়, তাহলে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে সংগ্রামরত নেতাকর্মীদের মনোবলে আঘাত আসবে।’
তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইন্দ্রিস মিয়া এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘রাজীব জাফরের পিতা জাফর আহমদ চৌধুরী ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ। রাজীবের অন্তর্ভুক্তি দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত এবং এটি তারেক রহমানের অনুমোদনে হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা কিংবা বিরোধিতা করা দলের শৃঙ্খলার পরিপন্থী।’
তবে এসব ব্যাখায় তৃণমূল নেতারা সন্তুষ্ট নন। রবিউল নামের এক বিএনপি নেতা বলেন, আদর্শের জায়গা থেকে এ সিদ্ধান্ত দলে বিভাজন তৈরি করতে পারে। দলের ভিতরে নীতি, আদর্শ ও কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে ভবিষ্যতে তা দলের কাঠামোগত স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
সাতকানিয়া বিএনপির নেতা আদর্শ বলেন, রাজীব জাফরকে দলে আনার বিষয়টি কেবল একটি ব্যক্তিকে জায়গা দেওয়ার প্রশ্ন নয়, বরং এটি বিএনপির আদর্শিক অবস্থান এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আদর্শ ও কৌশলের দ্বন্দ্বে যদি কৌশলই প্রাধান্য পায়, তাহলে ভবিষ্যতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে আস্থা সংকট তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
এফপি/রাজ