ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় অন্তত আটজন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালায়, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করা। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলা ছিল সুনির্দিষ্ট এবং কোনো সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়নি।
পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট এলাকায় একটি মসজিদে হামলায় এক শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। কোটলিতে দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। মুজাফ্ফরাবাদে একটি সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, হামলাগুলো ভারতের আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে এবং পাকিস্তানি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে এর জবাব দিচ্ছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এই হামলাকে কাপুরুষোচিত আখ্যা দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান এর সমুচিত জবাব দেবে। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানি বাহিনী ইতিমধ্যে এর প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে এবং অন্তত দুইটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ভারত এই দাবি অস্বীকার করেছে।
জাতিসংঘ উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে।
এই হামলার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। উভয় দেশই পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, ভিসা বাতিল করেছে এবং ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তানের এক মন্ত্রী হানিফ আব্বাসি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, পাকিস্তানের ১৩০টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে তাক করে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা হবে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এফপি/রাজ