জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসছে। গ্রিসের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই বৈঠকটি আহ্বান করেছে পাকিস্তান, যা বিকেলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে এক গ্রেনেড হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ভারতীয় পর্যটক। এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’কে দায়ী করেছে ভারত। পাল্টা বক্তব্যে পাকিস্তান দাবি করেছে, হামলায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং তারা একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত চায়।
হামলার পর ভারত কয়েকটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে দেয় ভারত, যা দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে জলসম্পদ ভাগাভাগির ভিত্তি ছিল। পাশাপাশি, ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ভারত পাকিস্তানি সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার করেছে এবং ইসলামাবাদে তাদের হাইকমিশনের কর্মীসংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছে। পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত করা হয়েছে এবং SAARC ভিসাধারীদের দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমত, তারা সিমলা চুক্তি স্থগিত করে। এছাড়া ভারতীয় বিমান সংস্থার জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়, যার ফলে ভারতের এয়ারলাইনগুলোকে দীর্ঘ বিকল্প রুট ব্যবহার করতে হচ্ছে।
পাকিস্তান তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যও স্থগিত করেছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের জনবল কমানো হয়েছে এবং ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের অনুরোধে আজকের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের পদক্ষেপ আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছে। অন্যদিকে, ভারত জাতিসংঘকে সতর্ক করে বলেছে, পাকিস্তান এই বৈশ্বিক ফোরামকে ভারতের বিরুদ্ধে “প্রচার ও ভিত্তিহীন অভিযোগ” তুলতে ব্যবহার করছে।
নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি, গ্রিসের স্থায়ী প্রতিনিধি এভানজেলোস সেকেরিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করি। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
উত্তেজনার মধ্যে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাও চলছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি পাকিস্তান সফরে গিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তারা শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের আজকের বৈঠকে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে কূটনীতিকরা এখন তাকিয়ে আছেন এই আলোচনার দিকে, যা উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আনতে পারে কিনা।
এফপি/রাজ