একতরফাভাবে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত ঘোষণার পর পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই চেনাব নদীর পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এর ফলে নদীটির পাকিস্তান অংশে পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। খবর পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের।
গতকাল সোমবার (৫ মে) ভারত আকস্মিকভাবে চেনাব নদীর পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে দিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রোববার শিয়ালকোট জেলার মারালা হেডওয়ার্কসে ৩৫ হাজার কিউসেক পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হলেও সোমবার সকালে তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়ে মাত্র ৩ হাজার ১০০ কিউসেকে নেমে আসে।
পাঞ্জাব সেচ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রোববার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ভাটির দিকে (পাকিস্তান অংশে) নদীর প্রায় সম্পূর্ণ প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে ভারত আমাদের জল ব্যবহার করছে। তারা চেনাব অববাহিকায় অবস্থিত তাদের বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ভরাট করছে। এটি সিন্ধু পানি চুক্তির একটি সুস্পষ্ট ও গুরুতর লঙ্ঘন। তারা এমন কাজ করতে পারে না।’
দ্য ডনের প্রাপ্ত নথি অনুসারে, চেনাব অববাহিকায় ভারতের তিনটি বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে: ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাকাল ডুল বাঁধ (জলাধার ধারণক্ষমতা ৮৮ হাজার একর ফুট), ৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাগলিহার বাঁধ (পাকাল ডুলের উজানে অবস্থিত, জলাধার ধারণক্ষমতা ৩ লাখ ২১ হাজার ২ একর ফুট) এবং ৬৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সালাল বাঁধ (বাগলিহার থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে, জলাধার ধারণক্ষমতা ২ লাখ ২৮ হাজার একর ফুট)।
পাকিস্তান সরকারের ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, সালাল বাঁধ থেকে পাকিস্তানের মারালা ব্যারেজ ৭৬ কিলোমিটার ভাটিতে অবস্থিত। বর্তমানে যে হারে পানিপ্রবাহ কমেছে, তার মূল কারণ হলো ভারতের এই বাঁধগুলোতে পানি ভর্তি করা হচ্ছে। এই বাঁধগুলোর সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ১২ লাখ একর ফুটেরও বেশি। যদি ভারত বাঁধগুলো ভরাট করা অব্যাহত রাখে এবং পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তবে পাকিস্তান সম্ভবত আরও চার থেকে পাঁচ দিন পানিবিহীন থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভারত যদি হঠাৎ করে ভাটির দিকে বিপুল পরিমাণে পানি ছেড়ে দেয়, তাহলে চেনাব অববাহিকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, যা স্থানীয় জনগণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। মারালার ধারণক্ষমতা ১১ লাখ কিউসেক হলেও চেনাব অববাহিকায় ভারতের বাঁধগুলোর সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ১৩ লাখ একর ফুটের বেশি। তবে জম্মু-তাভি ও মুনাওয়ার-তাভি শাখা নদী থেকে পাকিস্তানে প্রবেশ করা পানির ওপর ভারতের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
এদিকে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সিন্ধু নদী ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের (ইসা) পরামর্শক কমিটির একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ভারতের এই একতরফা সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানের খরিফ ফসলের জন্য পানির তীব্র ঘাটতি দেখা দেবে, যেখানে ইতোমধ্যেই ২১ শতাংশ ঘাটতির পূর্বাভাস রয়েছে।
এফপি/এমআই