গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (DRC) পৃথিবীর অন্যতম ধনী খনিজ সম্পদের আধার। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটির মাটির নিচে প্রায় ২৪ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কোবাল্ট, লিথিয়াম, কোলটান, ইউরেনিয়াম, স্বর্ণ, হীরা এবং তামা। এই সম্পদের পরিমাণ ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত জিডিপির সমান।
তবুও, এই বিপুল সম্পদের দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটির প্রায় ৭৩.৫% মানুষ দৈনিক $২.১৫ এর কম আয়ে জীবনযাপন করেছে।
ঔপনিবেশিক শোষণ ও ইতিহাসের ছায়া
১৬শ শতকে ইউরোপীয়দের আগমন থেকে শুরু করে ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত কঙ্গো ছিল বেলজিয়ামের উপনিবেশ। এই সময়ে দেশটির মানুষ ও সম্পদের উপর ব্যাপক শোষণ চালানো হয়। বিশেষ করে রাবার, কোবাল্ট এবং ইউরেনিয়ামের জন্য কঙ্গো ছিল ইউরোপীয়দের প্রধান লক্ষ্য। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ব্যবহৃত পারমাণবিক বোমার ইউরেনিয়ামও কঙ্গো থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছিল।
স্বাধীনতার পরেও কঙ্গো দুর্নীতি ও বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি, যেমন Glencore, দেশটির খনিজ সম্পদ আহরণে জড়িত থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। ২০২২ সালে Glencore স্বীকার করে যে তারা কঙ্গোতে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে।
এছাড়া, কোবাল্ট পাচারও কঙ্গোর অর্থনীতিতে বড় সমস্যা। জাম্বিয়া, বুরুন্ডি ও তানজানিয়ার সীমান্ত দিয়ে কোবাল্ট পাচার হয়, যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত সীমান্ত কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে পাচারকারীদের সহায়তা করে।
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে M23 বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়মিত সংঘর্ষে লিপ্ত। এই গোষ্ঠীটি রুয়ান্ডার সমর্থনে কঙ্গোর খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলো দখল করে এবং সেখান থেকে কর আদায় করে। সম্প্রতি, তারা কোলটান উৎপাদনে ১৫% কর আরোপ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গোর খনিজ সম্পদের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি AVZ এবং মার্কিন কোম্পানি KoBold Metals কঙ্গোর Manono লিথিয়াম প্রকল্পে $১ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগের চুক্তি করেছে।
এছাড়া, কঙ্গো ও রুয়ান্ডা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি শান্তি প্রস্তাব জমা দিয়েছে, যা পূর্ব কঙ্গোর সংঘাত নিরসনে সহায়ক হতে পারে।
কঙ্গোর বিপুল খনিজ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দেশটি চরম দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও সংঘাতে জর্জরিত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ন্যায়সঙ্গত সহায়তা।
এফপি/রাজ