আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন। সকাল-বিকেল চায়ের দোকান, বাজার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে পারিবারিক আড্ডা- সব জায়গাতেই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ‘কোন প্রার্থী এগিয়ে, কে কতটা গ্রহণযোগ্য এবং কে দলীয় মনোনয়ন পাবেন’। চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মীরাও।
তিন উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে প্রতিদিনই চলছে শোডাউন, গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের কাছাকাছি যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অনেকের প্রচারণা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মনে হচ্ছে নির্বাচন যেন দরজায় কড়া নাড়ছে।
এ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রকাশ্যে প্রচারণায় নেমেছেন। অধিকাংশই স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ফলে বিএনপির ভেতরে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও স্থানীয় প্রার্থী দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।
কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন- বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কৃষকদল সভাপতি। তিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ, শতাধিক বিলবোর্ড স্থাপন এবং নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন। দাবি করছেন তিনি প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন, তবে অন্য প্রার্থীরা এই দাবি মানছেন না। তুহিনের বাড়ি পাবনা-৩ এলাকায় না হওয়ায় ‘বহিরাগত প্রার্থী’ বিতর্কে দল বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
কে এম আনোয়ারুল ইসলাম- সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। প্রতিদিন গণসংযোগ করছেন, স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সমর্থকরা দাবি করছেন তিনিই জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
হাসাদুল ইসলাম হীরা- সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে কারাভোগের অভিজ্ঞতা রয়েছে। স্থানীয় প্রার্থী দাবিতে প্রতিদিনই মাঠে রয়েছেন। সমর্থকরা দাবি করছেন চূড়ান্ত মনোনয়ন তাকেই দিতে হবে।
আলহাজ্ব হাসানুল ইসলাম রাজা- বিএনপি সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, স্থানীয়ভাবে সংগঠন ও গণসংযোগে সক্রিয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অনেক আগে থেকেই অধ্যাপক আলী আজগরকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি ও তার সমর্থকরা ফজরের নামাজের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আব্দুল খালেক এবং খেলাফত মজলিস থেকে মুফতি মফিজ উদ্দিন প্রার্থী হলেও প্রচারণায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন।
তিন উপজেলার তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের বড় অংশ বহিরাগত প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিচ্ছেন। চাটমোহর উপজেলা বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দিয়েছে, যা মনোনয়ন ও প্রচারণায় প্রভাব ফেলছে।
স্থানীয়দের মতে, অন্যান্য দলের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও বিএনপির একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল বজায় থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের পক্ষে জয়ের সুযোগ তৈরি হতে পারে। তাই তারা মনে করছেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করে ঐক্যবদ্ধ হওয়াই এখন জরুরি।
প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি প্রার্থীরা স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন চূড়ান্ত মনোনয়ন নিশ্চিত করতে। রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন- মনোনয়ন যুদ্ধ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উত্তেজনা ও অস্থিরতা বজায় রাখবে।
এফপি/রাজ