শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বোরো ধানক্ষেতে হানা দিয়েছে বন্য হাতির পাল। কয়েকদিন ধরে একদল বন্য হাতি পাহাড়ি এলাকার কৃষকের সবজি ও বোরো ধানক্ষেত খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করে চলেছে। ফসল রক্ষায় এক সপ্তাহ ধরে মশাল জ্বালিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে সীমান্তবাসীদের।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সরজমিনে জানা যায়, গত কয়েকদিনে উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পানিহাটা, ফেকামারী, তালতলা ও পোড়াগাঁও ইউনিয়নের একাধিক এলাকায় এই তাণ্ডব চালায়।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, পাহাড়ি বন্য হাতির একটি দল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরেংপাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে আস্তানা করেছে। দিনের বেলায় পালিয়ে থাকে গহিন অরণ্যে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে নেমে আসে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পানিহাটা এলাকার ফসলি মাঠে। ফসল রক্ষায় রাত জেগে মশাল জ্বালিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ও ঘণ্টা বাজিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে পাহারা দিতে হচ্ছে চাষিদের। এরপরও থামছে না হাতির তান্ডব। ফলে উদ্বিগ্ন কৃষকরা আধাপাকা ধান কাটছে, এতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ওই এলাকার কৃষাণী জসমিনা বলেন, তার আবাদি ৫০ শতক জমি হাতিরদল খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করেছে। এখন তিনি কি খেয়ে বাঁচবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।
একই এলাকার কৃষক হারেজ আলী বলেন, তার নিজের ৩৫ শতকসহ এলাকার আব্দুস সাত্তারের ৩৫ শতক, কাজীমুদ্দীনের ২৫ শতক বোরো ধান ক্ষেত খেয়ে পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করেছে। এ সময় কৃষক হারুন অর রশিদের ৫৫ শতক জমির মিষ্টি লাউ এবং মুর্শিদ আলীর ২০ শতক মিষ্টি লাউ ক্ষেত খেয়ে একেবারে শেষ করে দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা আরো বলেন, তাদের আবাদি জমির ধান এখন প্রায় পেকে এসেছে। আর কয়েকদিন পড়েই কাটা যেতো এসব পাকা ধান। এমন সময়ে বন্য হাতি এসে ধান খেয়ে ফেলেছে। তাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। আগামীতে বউ-বাচ্চার খাবারের সমস্যা হবে।
উপজাতী কৃষাণী আশালতা নেংওয়া, বিজার কুবি, হোসেন আলীসহ অনেকেই বলেন, বিকাল হলেই বাবুরা (হাতির পাল) নেমে আসে পাহাড় থেকে। প্রতি বছর তাদের আবাদি জমি খেয়ে সাবাড় করছে। সোলার ফেন্সিং দিয়ে তাদের কোনো উপকারে আসছে না। সোলার ফেন্সিং দুমড়েমুচড়ে হাতির দল চলে আসে আবাদি জমিতে। দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছেন পাহাড়ে বসবাসকারী কৃষকরা।
মধুটিলা ইকো পার্কের ইজারাদার ও পোড়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মজিবুর রহমান চৌধুরী জানান, সরকারিভাবে স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করে হাতি মানুষের সহবস্থান সৃষ্টি করতে পারলে পাহাড়ে মানুষও রক্ষা পাবে হাতিও নিরাপদ থাকবে।
বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী জানান, হাতি প্রতিরোধে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) সদস্যরা কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত হাতি যেসব কৃষকদের ফসল নষ্ট করেছে তাদেরকে বন বিভাগের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আলহাজ আব্দুল ওয়াদুদ দ্যা ফিন্যান্সিয়াল পোস্টকে বলেন, হাতি আক্রান্ত এলাকায় ৬০-৬৫ ভাগ ধান পাকলে কৃষকরা ধান কাটলে সমস্যা হবেনা। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পাহাড়ী এলাকায় কৃষকদের খোঁজ খবর রাখাসহ নানা পরামর্শ দিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরবর্তীতে সরকারি প্রনোদনা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সহযোগিতা করা হবে।
এফপি/এমআই