Dhaka, Monday | 28 April 2025
         
English Edition
   
Epaper | Monday | 28 April 2025 | English
কাশ্মীরিদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় সেনারা
আসিফ নজরুলের বাসভবনে ড্রোন, নিরাপত্তা জোরদার
ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে পাঠাগার থেকে শত শত বই লুট
ঢাকার বাতাস আজ ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’
শিরোনাম:

রংপুরে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, ১ জনের মৃত্যু

প্রকাশ: রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ৮:৪৬ পিএম  (ভিজিটর : ৩২)

রংপুরে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, গাছের নীচে চাপা পড়ে ১ জনের মৃত্যু এবঙ আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন।

শনিবার রাত ১০টার দিকে রংপুর জেলার উপর দিয়ে এই ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রংপুরের বেশিরভাগ উপজেলা। এসময় রংপুর জেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে রংপুর মহানগরীসহ তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গাছপালা ও ফসলের।

কাউনিয়া উপজেলায় শনিবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে পুরোনো খেজুর গাছের নীচে চাপা পরে মোফাজ্জল হোসেন মিলিটারি (৫৮) নামের এক ব্যক্তি মৃত্যু হয়েছে। এ ঝড়ে গাছ পড়ে  আহত হয়েছে ১১ জন। এছাড়া বজ্রপাতে আহত হয়েছে আরো ১০ জন। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে ঝড়ের কবলে পড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি, সহস্রাধিক গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। ঝড়ের সময় বৈদ্যুতিক তারে গাছপালা পড়ে সারা উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে এবং উঠতি ফসল ইরি-বোরো ধান, ভুট্টা, বাদাম, মরিচ, কুমড়া, পাট, শষা, পটল, করলা, শাকসবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও কৃষকে কলা বাগান ভেঙ্গে মাটিতে নেতিয়ে পড়েছে, হাজার আম, লিচুর গুটি বাতাসে ঝড়ে পড়েছে।

জানা গেছে শনিবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সময় উঠানে রাখা অটোরিক্সা দেখার জন্য ঘর থেকে বাহিরে বের হলে পুরোনো খেজুর গাছ ভেঙ্গে মোফাজ্জল হোসেন মিলিটারির গায়ে পড়লে সে গুরুত্বর আহত হয়। পরে তাকে প্রথমে হারাগাছ ৫০ শষ্যা হাসপাতালে পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতেই তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় রাত পৌনে ২টার দিকে তিনি মারা যান। তিনি উপজেলার হারাগাছ পৌর সভার হক বাজার নয়াটারী গ্রামের মৃত্যু আছান উদ্দিনের পুত্র। খোঁজ নিয়ে 
জানা গেছে উপজেলার হারাগাছ পৌর সভা, হারাগাছ, সারাই, কুর্শা, শহীদবাগ, বালাপাড়া, টেপামধুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে, এতে করে শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সহস্রাধিক গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে।

উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়াও নাজিরদহ একতা উচ্চ বিদ্যালয় ও ইমামগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের টিনশেড ঘরের টিন ও বারান্দার টিন ঝড়ে উরে গেছে। নাজিরদহ গ্রামের কৃষক কোবাদ আলী ও আ: মজিদ জানান তাদের ২৪ শতাংশ করে জমির উঠতি ভুট্টা গাছ ঝড়ে ভেঙ্গে পড়েছে। নিজপাড়া গ্রামের কৃষক লোকমান আলী বলেন তার ৩০ শতাংশ জমির ধান মাটিতে নেতিয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার তানিয়া আকতার বলেন কোন এলাকায় ধান, পাট, ভুট্টা গাছ মাটিতে হেলে পড়েছে। তেমন একটা ক্ষতি হবেনা। ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরপণ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুল হক বলেন আমাদের নিকট আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তথ্য নেই। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা চাওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঠিক বন্ধের সময় হঠাৎ ধুলা ঝড় শুরু হয়। এসময় অস্বস্তিতে পরে নগরবাসী। কিছুক্ষণ ধুলাঝড় চলার পর শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড় আর বজ্রপাত। সেই সঙ্গে বৃষ্টি। কালবৈশাখী ঝড়ে নগরীর অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ঘরের টিনের চাল উড়ে যায়। এসময় পুরো নগরী লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে। তবে কয়েকদিন ধরে দাবদাহের প্রভাবে হাঁপিয়ে ওঠা রংপুর নগরীতে ফিরেছে প্রশান্তি। সেই সঙ্গে বৃষ্টিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন নগরবাসী। কালবৈশাখী এই ঝড়বৃষ্টি চলতি মৌসুমে এই প্রথম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় এ সময় প্রবল ঝোড়ো হাওয়া বইছিল ও সঙ্গে ছিল শিলাবৃষ্টি। এতে আম, লিচু, ভুট্টা, ধান, পাটসহ বিভিন্ন উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও বাতাসের তীব্রতায় পাকাঘরও ভেঙে গেছে। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও এর তান্ডবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন অংশে।
তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ওমর মিয়া জানান, ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে তার দুটি পাকাঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

একই ইউনিয়নের আব্দুল জব্বার জানান, ইকরচালি বাজার-সংলগ্ন বড় একটি বটগাছ ভেঙে তিনটি পাকাঘর ও বেশ কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে রাস্তঘাট বন্ধ হয়ে যায়, যা পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহায়তায় স্বাভাবিক করা হয়।

পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর, ছাওলা, অন্নদানগর ও কান্দি ইউনিয়নেও কালবৈশাখীর তাণ্ডবে অনেক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। বিভিন্ন সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মিলে সেসব গাছ সরানোর কাজ করেন।

ঝড়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। তাদের স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের নাম জানা যায়নি। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহরেও পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ লাইনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে কয়েকদিনের প্রচণ্ড দাবদাহের পর ঝড়-বৃষ্টিতে নগরীতে কিছুটা প্রশান্তি ফিরেছে। রংপুর নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাপলা চত্বর এলাকার নাজমুল হাসান বলেন, গত কয়েকদিন খুব গরম ছিল, আজ ঝড় হলেও বৃষ্টিতে কিছুটা শান্তি পেয়েছি।

হাজীপাড়া চামড়াপট্টি এলাকার বাসিন্দা ফাহিম মুরশেদ বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং অনেক ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। পুরো নগরী এখন লোডশেডিংয়ের কবলে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল এবং বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ মিলিমিটার। তবে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, ঝড় বৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই ফসলের ক্ষতি হয়। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরুপণ করা যায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ চলছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক চিত্র জানতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। পরবর্তীতে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝