পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরপরই রোমে প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন ক্যাথলিক চার্চের জ্যেষ্ঠ নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি ও কার্ডিনাল জর্জ জ্যাকব কুভাকাদ। এই সাক্ষাৎকারগুলোতে দারিদ্র্য দূরীকরণ, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উভয় পক্ষের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে।
প্রফেসর ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে সবাইকে আলিঙ্গন করার ক্ষমতা পোপের রয়েছে।” তিনি আরও জানান, ভ্যাটিকান ব্যাংকের দরিদ্রবান্ধব সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে লেখা তার একটি সমালোচনামূলক চিঠি ভ্যাটিকানের অফিসিয়াল সংবাদপত্র ল’ ওসেরভেটোর রোমানোর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই চিঠিতে তিনি ব্যাংকটিকে দরিদ্রদের প্রতি আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করার পরামর্শ দেন, যা পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসির সঙ্গে সাক্ষাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। তারা ইউক্রেন ও গাজায় চলমান সংঘাত অবসানের আহ্বানে পোপ ফ্রান্সিসের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তোমাসি তার ভিয়েতনাম সফরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া খুব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে।” প্রফেসর ইউনূস ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেন, “বাংলাদেশও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার প্রচেষ্টায় ভিয়েতনামকে অনুকরণ করছে।”
ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে আগত কার্ডিনাল জর্জ জ্যাকব কুভাকাদ ঘোষণা দেন, বাংলাদেশের ক্যাথলিক চার্চ এ বছরের সেপ্টেম্বরে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করবে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের নেতারা একত্রিত হবেন। প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টা তুলে ধরেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে রোমে পোপ ফ্রান্সিস ও প্রফেসর ইউনূস যৌথভাবে “পোপ ফ্রান্সিস-ইউনূস থ্রি জিরো ক্লাব” চালু করেন। এই ক্লাবের লক্ষ্য শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নীট কার্বন নিঃসরণ—এই তিনটি বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা ও কার্যক্রম বৃদ্ধি করা। এই উদ্যোগটি বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে, যেখানে তারা নতুন ধারণা বিকাশ ও টেকসই সমাধান তৈরি করতে পারে।
প্রফেসর ইউনূস ২০২৫ সালের ১২-১৩ সেপ্টেম্বর ভ্যাটিকান সিটিতে অনুষ্ঠিতব্য “ওয়ার্ল্ড মিটিং অন হিউম্যান ফ্র্যাটার্নিটি” সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য পোপ ফ্রান্সিসের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। এই সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও চিন্তাবিদরা অংশগ্রহণ করবেন এবং “টেবিলস অফ হিউম্যানিটি” নামে একটি নতুন মানবিক সনদের খসড়া প্রণয়ন করবেন।
এই সাক্ষাৎকারগুলো প্রফেসর ইউনূসের বৈশ্বিক শান্তি, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রচেষ্টার প্রতি ভ্যাটিকানের স্বীকৃতি ও সমর্থনের প্রতিফলন।
এফপি/রাজ