দীর্ঘদিন শান্ত থাকার পর আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের গভীর অঞ্চল। দস্যুতা দমনে বহু বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল, তা এখন হুমকির মুখে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এলাকার জেলে ও বনজীবীরা বলছেন, নতুন করে গঠিত দস্যু বাহিনীগুলোর কারণে তারা এখন মাছ ধরতে গিয়েও নিরাপদ বোধ করছেন না।
জানা গেছে, ‘আসাবুর বাহিনী’, ‘শরীফ বাহিনী’, ‘আবদুল্লাহ বাহিনী’, ‘মঞ্জুর বাহিনী’ এবং সবচেয়ে ভয়ংকর ‘দয়াল বাহিনী’ নামে পাঁচটি নতুন চক্র আবারও সুন্দরবনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের অনেকেই পূর্বে আত্মসমর্পণ করা মজনু বা রফিক বাহিনীর সদস্য ছিল। আবার কেউ কেউ ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় জেল ভেঙে পালিয়ে এসে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে।
তাদের কৌশল প্রায় একই, মাছ ধরার ট্রলারে হামলা, জেলে অপহরণ, মোবাইল-টাকা ছিনতাই এবং পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি।
সাম্প্রতিক এক ঘটনায়, কয়রা উপজেলার আতাহার হোসেন ও রফিকুল ইসলামকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে দয়াল বাহিনী। একইভাবে, গত ১০ এপ্রিল করিম শরীফ বাহিনীর কবল থেকে কোস্টগার্ড উদ্ধার করেছে ছয় নারীসহ ৩৩ জন জেলেকে।
জেলেরা জানিয়েছেন, বনদস্যুরা শুধু অপহরণ নয়, মাঝেমধ্যে ট্রলারেও চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে মারধর, এমনকি নদীতে ফেলে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। অনেকে এখন নৌকায় মুরগি ও চাল রাখে না, যাতে দস্যুরা খাওয়ার লোভে আক্রমণ না করে।
২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়কালে সুন্দরবনের ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে। এরপর ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। তবে সাম্প্রতিক অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনার পর নতুন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপ বাড়ছে।
কোস্টগার্ড জানায়, তারা প্রতিটি অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। বন বিভাগ ও পুলিশও সমন্বয়ে কাজ করছে।
সুন্দরবন শুধু জীববৈচিত্র্যের আধার নয়, এটি লাখ লাখ মানুষের জীবিকার অংশ। নতুন করে দস্যু আতঙ্ক সেই জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তাই শুধু অভিযান নয়, দরকার গোয়েন্দা নজরদারি, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও দস্যু পুনর্বাসনের কার্যকর কর্মসূচি।
এফপি/রাজ