বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের ১১ জন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ—এই ১১ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনা বা অন্য কোনো অভিযুক্তের নাম প্রকাশিত হয়নি। বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রক্রিয়ার তদারকি করছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় অন্তত ৭৭৫ জন নিহত এবং ২২,০০০ জন আহত হন।
শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকার ভারতের সঙ্গে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে এখন পর্যন্ত ভারত সরকার এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
রেড নোটিশ কোনো আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়, বরং এটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম। প্রত্যেক দেশ নিজস্ব আইন অনুযায়ী রেড নোটিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই করে থাকে, যা প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনা ও তার সরকারের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বিচার নিশ্চিত করতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছে। তবে রেড নোটিশ জারি এবং অভিযুক্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া এখনো চলমান এবং এর সফলতা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আইনি প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে।
এফপি/রাজ