Dhaka, Saturday | 19 April 2025
         
English Edition
   
Epaper | Saturday | 19 April 2025 | English
মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫ শতাধিক অভিবাসী গ্রেপ্তার
ইয়েমেনের বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
নিজের প্রতি সৎ থেকে ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতে চান মেসি
পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’
শিরোনাম:

একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:২২ পিএম  (ভিজিটর : ৩৩)

একাত্তরে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটিকে ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) পদ্মায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি বৈঠকে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলকে একাত্তরের জন্য ক্ষমার চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এ কথা জানান পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বৈঠকে আমি পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপন করেছি। যেমন—আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা দেওয়া, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঠানো বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।

প্রায় ১৫ বছর পর আজ ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ দেশটির পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন, আর ঢাকার পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন নেতৃত্ব দেন। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের আলোচনা চলে।

অমীমাংসিত বিষয়ে বাংলাদেশের উত্থাপনে পাকিস্তানের উত্তর জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, তারা বলেছে এ বিষয়টি নিয়ে তারা রিমেইন এনগেজ থাকবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে সামনের দিনে। পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বৈঠকটি নিয়মিত হওয়ার কথা। কাজেই ২০১০ সালের পর যে বৈঠকটি হলো, সেটি নিয়ে আমরা আশা করি না যে একদিনে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের দিক থেকে এ বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা করার সদিচ্ছা তারা ব্যক্ত করেছে।

একাত্তরে ক্ষমার বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা আমাদের দিক থেকে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি এবং কূটনীতির কাজ হচ্ছে, আমাদের অবস্থান তুলে ধরে সেটা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এখানে বিষয়টি এমন হয় যে আমি বিষয়টি তোলার পরে তারা আলোচনার মধ্যে রাখতে চাননি। তারা বলেছে, এ নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা অব্যাহত রাখতে চান। কাজেই এই আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি ভবিষ্যতে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নেব, এটা হচ্ছে আমার অবস্থান।

বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয় তোলার কারণ তুলে ধরেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, আমরা দুটো পয়েন্ট মাথায় রেখে এ বিষয়টি উত্থাপন করেছি। একটি হচ্ছে, দেড় দশক পর আমরা এটা নিয়ে বসলাম। কাজেই পুনরায় এই বিষয়টি তোলা উচিত। এটা তোলা উচিত, কারণ তুলেছি এটার ন্যায্যতা…। এ ছাড়া, আমরা পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলকে বলেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, সাম্প্রতিকালে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার কারণে।

তিনি বলেন, সেই দিক থেকে সম্পর্ক একটি শক্তি ভিত্তিতে দাঁড় করাতে গেলে আমাদের এই অমীমাংসিত বিষয়গুলোকে মীমাংসায় আসার প্রয়োজন এবং এটা বলেছি। আমরা মনে করি, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন যে সম্পর্ক, এই সময়টাতে এই বিষয়গুলো সমাধান করার জন্য উপযুক্ত সময়।

ক্ষতিপূরণ

পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জসীম উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান একটি হিসাব অনুযায়ী, ৪ হাজার মিলিয়ন ইউএস ডলার পাওনা। আরেকটি হিসাবে বলা হয়েছে, ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন; এটি একটি। আমরা আজকের আলোচনায় এই ফিগারটি উল্লেখ করেছি। আরেকটি হচ্ছে, ১৯৭০ সালের নভেম্বরে যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, সেখানে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র ও এজেন্সি ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমপরিমাণ অর্থ দান করেছিল, সেটার হিস্যা আমরা চেয়েছি।

হিস্যার পাওনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্ধিত হার যুক্ত করছে না কেন, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটি আরও বিস্তারিত আলোচনা করার বিষয়। আজকে আমরা তাদের কাছে যেটা শুনতে চেয়েছি, আমরা এ বিষয়ে এনগেজ থাকব। এই বিষয়ে গত দেড় দশকে কোনো আলোচনা হয়নি। কাজেই আমাদের লক্ষ্য ছিল বিষয়টি তাদের নজরে আনা। আমাদের প্রত্যাশা, সামনে যেসব এনগেজমেন্ট হবে, বৈঠক হবে, এ বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করার সুযোগ পাব।

বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি ৩ লাখের বেশি

একাত্তরে পর বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ পাকিস্তানি নাগরিক দেশে ফিরে গেছে। তবে এখনও বাংলাদেশে আটকে আছে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ পাকিস্তানি নাগরিক, যাদের বসবাস বাংলাদেশের ১৪ জেলায় ৭৯টি ক্যাম্পে।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। দেড় দশক আগে আমরা বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা বলেছি। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ পাকিস্তানি নাগরিক সেখানে ফিরে গেছেন। আর বাকি আছে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭, যারা বাংলাদেশের ১৪ জেলায় ৭৯টি ক্যাম্পে বসবাস করছে।

বিদ্যমান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত উভয়পক্ষ

দীর্ঘ ১৫ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবের মধ্যে হওয়া বৈঠকে উভয়পক্ষ বিদ্যমান সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে একমত হয়েছে। এ বিষয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, আজকের বৈঠকে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একমত হয়েছে। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছি।

পররাষ্ট্রসচিব জানান, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছি। পাকিস্তানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং শুল্ক বাধা দূরীকরণ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর আমি গুরুত্বারোপ করি।

তিনি বলেন, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও আলোচনা হয়েছে, যাতে প্রযুক্তি, উন্নত প্রজাতি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এ ছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বন্যা প্রতিরোধে দুই দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

কানেক্টিভিটি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে দুদেশের মধ্যে সরাসরি শিপিং রুট চালু হয়েছে এবং সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হবে। পাকিস্তানের আরেকটি এয়ারলাইন্স অনুমতি চেয়েছে, সেটা প্রক্রিয়াধীন।

পররাষ্ট্রসচিব জানান, আমরা উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন সুযোগ সন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি এবং এ সব ক্ষেত্রে পারস্পরিক শিক্ষা বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। পাশাপাশি, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, লেখক ও শিক্ষাবিদদের সফরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উভয়পক্ষ থেকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে সেগুলো তুলে ধরেন জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা সার্কের আওতায় সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে এর পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়েছি, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যায়। আমরা ওআইসির সনদ বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি।

তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় দুই দেশই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে। আমি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করি।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা সম্পর্কে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রতিরক্ষা নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তারা দুই দেশে প্রশিক্ষণে যান-আসেন। এই যে যোগাযোগ, এ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

অস্ত্র বিক্রি সংক্রান্ত কোনো কথা এ বৈঠকে হয়নি বলেও জানান জসীম উদ্দিন।

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: financialpostbd@gmail.com, tdfpad@gmail.com
🔝