ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি ১৫ এপ্রিল শেষ হওয়ায় দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। হিলি স্থলবন্দরে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ ট্রাক চাল প্রবেশ করলেও আমদানি বন্ধ হওয়ার গুঞ্জনে হঠাৎ করেই চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, এ ধারা চলতে থাকলে চালের বাজার অস্থির হয়ে পড়বে এবং সাধারণ ক্রেতাদের ওপর চাপ বাড়বে।
হিলি স্থলবন্দরে আগের তুলনায় চাল আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেলেও খুচরা ও পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। বরং স্বর্ণা চাল যা কয়েকদিন আগে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকায়। সরু জাতের শম্পা কাটারি চাল ৬৪-৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬৭-৬৮ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এমনকি কেউ কেউ আরও বেশি দাম চাইছেন, কারণ বাজারে জল্পনা চলছে ১৫ এপ্রিলের পর ভারত থেকে আর চাল আসবে না।
চাল কিনতে আসা পাইকার ফিরোজ হোসেন জানিয়েছেন, “যেখানে আগের দামে মোকামগুলোতে সরবরাহ দিচ্ছিলাম, এখন কেজিতে ২-৫ টাকা বেশি পড়ছে। যারা বড় আমদানিকারক, তারা এখন চাল বন্দর থেকে খালাস করেও বিক্রি করছেন না, বরং নিজেদের গুদামে রেখে দিচ্ছেন। কারণ সবাই ভাবছে, সামনে সংকট হবে।”
আরেক পাইকার ইয়াসিন মোল্লা বলেন, “সোমবার এসে দেখি আগের দিনের তুলনায় সব ধরনের চালের দাম আরও ২-৩ টাকা বেড়েছে। যাদের হাতে চাল আছে, তারা মজুত করে রাখছে যাতে পরে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।”
চাল আমদানির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগের দিনগুলোতে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা পহেলা বৈশাখের সরকারি ছুটিতেও আমদানি চালু রাখেন। উদ্দেশ্য ছিল, যতটা সম্ভব চাল দেশে প্রবেশ করানো যায়। তবুও উদ্বেগ কাটেনি।
হিলি শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, “চাল আমদানির অনুমতির সময়সীমা ছিল ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই পর্যন্ত যাদের এলসি আছে, তারা চাল আনতে পারবেন। প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ ট্রাক চাল বন্দর দিয়ে আসছে। দ্রুত চাল ছাড় করতে আমদানিকারকদের সহায়তা করা হচ্ছে।”
চাল আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমাদের অনেক ট্রাক এখনও ভারতের অভ্যন্তরে আটকা। এলসি খোলা থাকলেও সব চাল দেশে আসেনি। তাই আমরা চাইছিলাম, অন্তত আরও এক মাস সময় বাড়ানো হোক, যাতে বাজার স্থিতিশীল রাখা যায়।”
আরেক আমদানিকারক ললিত কেশেরা বলেন, “এখন দেশের বাজারে চাহিদা বেশি, আর সরবরাহ কম। তার ওপর ভারতেও চালের দাম কিছুটা বেড়েছে, আর বাংলাদেশের ডলার দর বৃদ্ধিতে খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।”
চাল আমদানির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় আমদানিকারকরা দ্রুত সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন ধান উঠতে আরও সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত চাল আমদানি অব্যাহত থাকলে বাজারে ভারসাম্য বজায় থাকবে।
এফপি/রাজ