বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড়, টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র ও দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়।
এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং দেশি-বিদেশি অতিথিরা। শোভাযাত্রায় ৭টি বড়, ৭টি মাঝারি ও ৭টি ছোট মোটিফসহ মোট ২১টি মোটিফ প্রদর্শিত হয়েছে।
শোভাযাত্রার শুরুতে ছিল পুলিশের সুসজ্জিত ১৮টি ঘোড়া, এরপর ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর ৪৬৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল, চারুকলা অনুষদের দল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ সদস্যের দল, বান্দরবানের কিশোর ব্যান্ডদলের ১৪ সদস্যের টিম, বামমা ব্যান্ডসংগীত শিল্পী-গোষ্ঠীর ১০০ সদস্য, ৫০ সদস্যের বাউল সাধুর দল, ১০০ সদস্যের কৃষকদল ও মূলধারার শিল্পী-গোষ্ঠী, সাধনা নৃত্য সংগঠনের ১০০ সদস্যের দল এবং রংধনু পোশাকশ্রমিক শিল্পী সংগঠনের ৫০ জনের দল। এছাড়াও ছিল ২০ সদস্যের নারী ফুটবলারের প্রতিনিধি দল, অ্যাক্রোবেটিক শিল্পীদের ১৭ সদস্যের দল, ২০টি রিকশা নিয়ে রিকশা র্যালি এবং পাঁচটি ঘোড়ার গাড়ির বহর। মূল আকর্ষণ হিসেবে ছিল ছোট-বড় ৫০০টি মোটিফ।
শোভাযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করেছে। এছাড়া, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং একাত্মতা উদযাপিত হয়েছে, যা এখন দেশব্যাপী একটি পরিচিত সাংস্কৃতিক আয়োজনে পরিণত হয়েছে।
এই শোভাযাত্রা ঢাবির চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে শুরু হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে সময়ের পরিবর্তনে শোভাযাত্রার চরিত্রে পরিবর্তন এসেছে, এবং এটি এখন 'আনন্দ শোভাযাত্রা' নামে পরিচিত। এটি এখন সর্বস্তরের মানুষের জন্য এক সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে, যা বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এফপি/রাজ