লোকবল সংকট ও অতিরিক্ত রোগীর চাপের মধ্যেও আশার আলো জ্বালিয়েছে পাবনা সদর হাসপাতাল। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে এই প্রথম চালু হলো বিশেষ নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (SCANU)।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে অপরিণত ও ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতকদের চিকিৎসার জন্য পাবনার রোগীদের রাজশাহী কিংবা ঢাকায় পাঠাতে হতো। নতুন এই উদ্যোগের ফলে এখন থেকে স্থানীয়ভাবেই পাওয়া যাবে আধুনিক নবজাতক চিকিৎসা সেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, SCANU বিভাগে মূলত অপরিণত শিশু, জন্মের সময় ওজন ২.৫ কেজির কম এমন নবজাতক এবং জন্মপরবর্তী ঠান্ডাজনিত জটিলতায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। এখানে সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সিং সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিভাগীয় প্রধান ডা. পরিমল বলেন, “জন্মের পর অনেক নবজাতক জটিল সমস্যায় ভোগে। আগে বাধ্য হয়ে তাদের রাজশাহী বা ঢাকায় পাঠাতে হতো। এখন এখানেই উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে—ইনশাআল্লাহ।”
অবসরপ্রাপ্ত শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নীতিষ কুমার কুন্ডু বলেন, “পাবনায় নবজাতকদের জন্য এমন একটি উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি শিশু মৃত্যুহার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) পাবনা জেলা শাখার সভাপতি ডা. তসলিমুল আরেফিন বলেন, “চিকিৎসক সংগঠন হিসেবে আমরা সবসময় মানুষের পাশে থাকতে চাই। সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় এই সেবা আরও ফলপ্রসূ হবে।”
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “প্রতি মাসে জন্ম নেওয়া প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুই কোনো না কোনো জটিলতায় ভোগে। এই কেন্দ্র চালুর ফলে প্রাথমিকভাবে অন্তত ১০টি নবজাতককে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে, যা ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণ করা হবে।”
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার বলেন, “সঠিক চিকিৎসা সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। শিশুদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।”
পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, “নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। নবজাতকদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিনই রোগী বাইরে পাঠাতে হতো। সেই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই SCANU চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং লজিস্টিক সাপোর্ট পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাসপাতালের পরিচালক, সিনিয়র চিকিৎসক, বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তার ও নার্স, চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নবজাতকদের জীবনরক্ষায় পাবনা সদর হাসপাতালের এই উদ্যোগকে স্বাস্থ্যসেবায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এফপি/জেএস