‘এক কাপ চায়ে তোমাকে চাই’—এই লাইনেই বোঝা যায় বাঙালির সঙ্গে এই ভিনদেশি পানীয়ের গভীর সম্পর্ক। সকালের শুরু থেকে সন্ধ্যার আড্ডা, চা যেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। তৃতীয় শতকে চীনা চিকিৎসক হুয়া তাও-এর গ্রন্থে প্রথম চায়ের উল্লেখ মেলে।
পরে পর্তুগিজ ব্যবসায়ী ও পাদ্রিদের হাত ধরে চা ইউরোপে পৌঁছায়। জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশরা চা বাণিজ্যে মনোযোগ দেয় এবং ভারতে বৃহৎ আকারে চা চাষ শুরু করে। চায়ে থাকা ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে ও শক্তি বাড়ায়।
চায়ের উপকারিতা
১।চা পাতায় থাকা পলিফেনলস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
২। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৩।রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪। ত্বক ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৫। হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে ভঙ্গুর হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৬। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে সক্রিয় রাখে, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বিপাকক্রিয়া ভালো থাকে।
৭। চায়ে থাকা ভিটামিন ও খনিজ সাধারণ সুস্থতায় সহায়ক।
ঝুঁকিও আছে
১। অতিরিক্ত ক্যাফেইনের ফলে হতে পারে উদ্বেগ, মাথা ঘোরা, বুকজ্বালা ও ঘুমের সমস্যা।
২। গর্ভবতীদের জন্য বেশি ক্যাফেইন ক্ষতিকর, গর্ভপাত বা কম ওজনের শিশুর ঝুঁকি বাড়ে।
৩। বারবার খুব গরম চা (১৪০–১৬০ ডিগ্রি) পান করলে মুখ ও খাদ্যনালীর কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
চা ও কিডনির সম্পর্ক
১। ব্ল্যাক টি–তে অক্সালেট বেশি থাকে, তাই এটি বেশি খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
২। গ্রিন টি কিডনির পক্ষে তুলনামূলক ভালো, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং কিডনি থেকে অ্যালবুমিন লিকেজ কমায়।
যাদের কিডনি ফেলিওর আছে, তাদের চা পানের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি। জল গ্রহণের পরিমাণ কমলে অবস্থা খারাপ হতে পারে।
কিডনি রোগীদের জন্য কতটা চা নিরাপদ হবে, তা চিকিৎসক দেখে ঠিক করবেন।
দিনে কতটা চা খাবেন?
গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ১–২ কাপ চা উপকারী। ৩–৪ কাপের বেশি চা পান করলে ঝুঁকি বাড়ে। চায়ে চিনি মেশালে তার উপকার অনেকটাই কমে যায় এবং ক্যালরি বৃদ্ধি পেয়ে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ায়। অতিরিক্ত চা খেলে অনেকে পানি কম পান করেন, এতে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি থাকে। ব্ল্যাক টিতে দুধ মিশিয়ে খেলে শরীরের জন্য তুলনামূলক উপকারী।
টি ব্যাগ কি ক্ষতিকর?
টি–ব্যাগে থাকা প্লাস্টিক ও কাপের মাইক্রোপ্লাস্টিক উষ্ণ চায়ে মিশে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এগুলো কোষে জমে দীর্ঘমেয়াদে অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।
এফপি/অ