নারীরা পরিবার, সমাজ কিংবা প্রশাসন—কোথাও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, নারীরা চলাফেরা ও আচরণগত স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যে ধরনের বাধার মুখে পড়ছেন, তা আগের তুলনায় কল্পনার বাইরে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশানে ‘চ্যালেঞ্জিং সোশ্যাল নমর্স অ্যান্ড পাওয়ার ডায়নামিকস: টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার-ফ্রি ফিউচার’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের কর্মসূচিকে সামনে রেখে এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
ঢাকার বাইরের নারীদের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ঢাকা শহর তুলনামূলক নিরাপদ হলেও মফস্সলে নারীরা গুরুতর সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন। পরিবার, সমাজ কিংবা প্রশাসন—কোনো জায়গাতেই তারা সুরক্ষা অনুভব করছেন না। এ সময় তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সংগীত শিক্ষকের নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার বাইরে প্রাক্–নির্বাচনী আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। এসব সভার উদ্দেশ্য—জনগণ আগামী সরকার থেকে কী আশা করছে এবং নতুন নির্বাচন কমিশনকে কতটুকু সক্ষম বলে মনে করছে, তা বোঝা। তার মতে, আগে মানুষের কাছে সুশাসন ও দুর্নীতি বড় উদ্বেগ ছিল, এখন প্রথমেই উঠে আসছে নিরাপত্তার প্রশ্ন। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক—সব ধরনের নিরাপত্তাহীনতাই আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে।
মফস্সলের বাস্তব পরিস্থিতি বর্ণনা করতে তিনি বলেন, অনেক নারী তাদের কথা বলার জন্য নিরাপদ জায়গা খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন। হিজড়া সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন ধর্মীয় মতাবলম্বী অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। মিটিং করতে চাইলে স্থানীয়রা বলেন, ‘দাদা, মিটিং করার দরকার নেই। আমরা এখন রাডারের নিচে থাকি। মিটিং করলে আরও সমস্যা হবে।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে গেছে, যার বড় অংশ নারী। বিনিয়োগ সংকট, বেকারত্ব ও আয়হীনতা নারীদের আর্থিক নিপীড়ন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাংস্কৃতিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু গানবাজনা বন্ধ হওয়াই নয়, পরিবারেও আচরণগত পরিবর্তন তৈরি হচ্ছে। সমাজের সঙ্গে নারীদের স্বাভাবিক যোগাযোগ ও পূর্ণাঙ্গ বিকাশের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসছে। তার মতে, রাজনৈতিক মত প্রকাশের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সময়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এফপি/এমআই