থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হলো ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা। সেখানে বিশ্বের ১২১ দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তানজিয়া জামান মিথিলা। ‘পিপলস চয়েজ’-এ দারুণ সাড়া পেয়ে সেরা ত্রিশে জায়গা করে নেন তিনি। প্রতিযোগিতা শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন এই তরুণী। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা, আগামীর পরিকল্পনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা শেষে দেশে ফিরেছেন। কেমন লাগছে?
অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। দেশের মাটিতে পা রাখা মাত্রই মনে হলো আমি সত্যিই ঘরে ফিরেছি। বিমানবন্দরে মানুষ যেভাবে ফুল আর করতালিতে আমাকে স্বাগত জানিয়েছে এটি কোনো মুকুটের চেয়ে কম নয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমি কুইন নাম্বার ওয়ান। এটিই আমার বড় পাওয়া। এর থেকে ভালো কিছু মনে হয় না আমি আমার জীবনে পেয়েছি। মনে হয়েছে থাইল্যান্ডে আমি একা যাইনি, সঙ্গে গেছে পুরো বাংলাদেশ।
মুকুট জিততে না পারলেও মানুষ আপনাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছে। এ অনুভূতিটা কেমন?
সত্যি বলতে, আমি কখনও ভাবিনি বাংলাদেশ এতটা এক হয়ে আমাকে সমর্থন করবে। বিশ লাখেরও বেশি ভোট, এটি অবিশ্বাস্য! আমি যখন দেখলাম ‘পিপলস চয়েজ’-এ শীর্ষ তিনে আছি, তখন শুধু একটা কথাই মনে হয়েছে মুকুট নয়, মানুষের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।
প্রতিযোগিতায় বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
প্রতিযোগিতা শুধু সৌন্দর্যের ছিল না। এটি ছিল আত্মবিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা, নেতৃত্ব আর প্রস্তুতির লড়াই। বিভিন্ন দেশ যেখানে ৫০-৬০ বছর ধরে এই প্রতিযোগিতায় আসছে সেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র পাঁচ বছরের। সেই জায়গায় একটি পজিশন নিয়ে আসা সবেচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কত বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তা বলে বোঝাতে পারব না। প্রতিযোগিতার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ট্রেনিং, রিহার্সাল, মিডিয়া সেশনসহ কতকিছু। দেশের মানুষ যদি আমাকে সাপোর্ট না করত তাহলে এইভাবে জয়ী হয়ে আসা সম্ভব ছিল না।
কঠিন ছিল নিজেকে প্রমাণ করা যে আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধি, আমি অকপটে কথা বলতে পারি, নিজের দেশকে শ্রদ্ধা, মর্যাদা আর শক্তি দিয়ে তুলে ধরতে পারি।
বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে থাকা কেমন অভিজ্ঞতা?
দারুণ। ১২১টি দেশের মেয়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনেছি। একুশ দিন একসঙ্গে ছিলাম। একটি পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। সুখ, দুঃখ শেয়ার করেছি। সবাই খুব প্রফেশনাল, আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু প্রতিযোগিতা থাকা সত্ত্বেও মানবিক।
এখন কী করতে চান?
প্রথমত বিশ্রাম (হাসি)। তারপর কাজ শুরু। অনেকেই জানেন ‘রাইজিং স্টার’ নামে একটি চ্যারিটি আছে। সেখানে আমি চিফ অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ২০১৬ সাল থেকে ফান্ড রাইজ করে এ সংস্থার মাধ্যমে অনেক মানুষকে সাহায্য করে আসছি। নিজেও অনেক সাহায্য করেছি। মিস ইউনিভার্সের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে একটি ফান্ড দেবে। ওই ফান্ডের অর্থ দিয়ে আমি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াব।
অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা...
অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়েও ভাবছি। ব্যাংককে থাকতেই আমাকে সিনেমার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ। আমি চাই বড়পর্দায় যাত্রা শুরু হোক এমন একটি চরিত্র দিয়ে, যেটি আমার মতোই শক্তির প্রতীক নিজের পরিচয় তৈরি করে, বাধা ভেঙে এগিয়ে যায়। আমি ভুল ভাঙা কোনো প্রজেক্টে যুক্ত হতে চাই না। এতবড় একটা সম্মান পেলাম। আমাকে তো ভেবেচিন্তে পথ চলতে হবে। ভালো গল্প, ভালো নির্মাতা, ভালো চরিত্র–এসবের সঙ্গে কাজ করতে চাই। শুধু জনপ্রিয় না হয়ে, চাই অর্থবহ কিছু করতে। ওটিটিতেও ভালো কিছু কাজের ইচ্ছা রয়েছে।
আপনি কী শিখলেন এই সফর থেকে?
স্বপ্ন অসম্ভব নয়। অসম্ভব হয় তখন, যখন ভয় স্বপ্নের চেয়ে বড় হয়ে যায়। সামনে এগিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস আমার আছে। আমি ভয় পাই না। আমি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কখনও থামে না। যত বাধাই আসুক স্বপ্ন দেখো। তুমি কিছু জয় করবে। অনেকেই বলে আমরা বাংলাদেশিরা একজন আরেকজনের ভালো চাই না। আমরা এগিয়ে আসি না অন্যের বিপদে। দশে মিলে কাজ করি না। এটি ভুল। বাংলাদেশের মানুষ যদি আশার আলো দেখে, যদি তারা দেখে এখানে কোনো সম্ভাবনা আছে, তাহলে প্রত্যেক মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসে।
আপনার এগিয়ে যাওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা কে?
মায়ের অনুপ্রেরণার কারণেই এতদূর আসতে পেরেছি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি অনেক সাপোর্ট করেছেন। তিনি যদি আমাকে সাপোর্ট না করতেন তাহলে মিথিলা হতে পারতাম না।
এফপি/জেএস