Dhaka, Thursday | 11 December 2025
         
English Edition
   
Epaper | Thursday | 11 December 2025 | English
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখে মৎস্য অধিদপ্তরকে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে: ফরিদা আখতার
সিআইডি ট্রেনিং সেন্টার থেকে এসআইয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৪০০ ছাড়াল
ঢাকায় বাড়ছে শীত, তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রিতে
শিরোনাম:

গর্তের পানি-ই শেষ ভরসা; মিষ্টি পানির সংকটে চর আতাউরের বাসিন্দারা

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:১৯ পিএম  (ভিজিটর : ৪০)
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

পানি মানেই দুশ্চিন্তা, পানি মানেই সংগ্রাম, আর পানি মানেই রোগ ব্যাধির আশঙ্কা। বিশাল সমুদ্রের পাশে থেকেও এই চরের মানুষ আজ পানির জন্য হাহাকার করছে। পুকুর শুকিয়ে কাঠ, নলকূপ বিকল, আর নদীর লোনা পানি ব্যবহারে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আক্রান্ত ত্বকের নানান রোগে। জীবনের এমন কঠিন বাস্তবতায় মানুষ এখন বাধ্য হয়ে বেছে নিয়েছে নতুন এক উপায়।

ঘরের সামনে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে সেখানে জমে থাকা সামান্য গোলা পানি ব্যবহার করা।একই পানিতে তারা থালাবাসন ধোয়, কাপড় কাচে, গোসল করে; এমনকি রান্নার কাজেও কখনো ব্যবহার করতে হয়। সেই পানি পান করে তাদের গৃহপালিত পশু পাখিরাও বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।

এই দৃশ্য নোয়াখালী হাতিয়ার চর আতাউরে। এই চরে দুটি গুচ্চগ্রাম ও একটি ব্যারাক হাউজে প্রায় চার শত লোকের বসবাস। তাতে সরকারি ভাবে দুটি বড় পুকুর খনন করা হয়। অস্বাভাবিক জোয়ারে পুকুরের পাড় ভেঙ্গে পানি ডুকে পড়ে। তাতে পলি জমে জমে পুকুর গুলো সমতলের মত হয়ে যায়। এখন আর পানি জমে না এই পুকুর গুলোতে। এছাড়া এসব বাসিন্দাদের জন্য চারটি গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি অনেক আগে বিকল হয়। এর মধ্যে একটি আছে কোন মতে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য মানুষ জনকে নদীর লোণা পানি সহ বিকল্প উৎস খোজতে হয়।

সরেজমিনে তরুবীতি গুচ্ছ গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, মধ্য বয়সি এক গৃহিনী ঘরের সামনে একটি গর্তের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে জমে যাওয়া গোলা পানিতে ঘরের আসবাবপত্র পরিস্কার করছেন। অল্প পানিতে থালাবাসন ভালো ভাবে পরিস্কার হয় কি না প্রশ্ন করলে তিনি জানান, কিছুই করার নেই। নদীর লোনা পানির চেয়ে অনেক ভালো গর্তের এই পানি। লোনা পানি ব্যবহারে শরীরে এলার্জি সহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। এজন্য ঘরের সামনে পুকুরের মধ্যে গর্ত তৈরি করে নিয়েছেন। তাতে দৈনন্দিন ব্যবহার, গোসল, রান্নার কাজে ব্যবহার সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীতা মিটাতে হয়।

অজিফা নামের এই গৃহিনী আরো জানান, ৭ বছর আগে এখানে বসবাস শুরু করেন। তরুবীথি ও ছায়াবীথি নামে এই দুটি গুচ্ছ গ্রামে দুই শতাধিক লোকের বসবাস ছিল। সবার জন্য চারটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময় তিনটি একেবারে বিকল হয়ে গেছে, এখন একটি নলকূপে কোনমতে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করা যায়। তাও মাঝে মধ্যে বিকল হয়ে থাকে।

একই দৃশ্য দেখা যায় পুকুরে উত্তর পাশে। আফিয়া খাতুন নামে একজন গর্তের মধ্যে নেমে নিজেদের পরিবারের জামাকাপড় পরিস্কার করছেন। ৫ ফুট দৈর্ঘ ৫ প্রস্থ এই গর্তের মধ্যে গোলা পানিতে তিনি পরিস্কার করার কাজ করছেন। আফিয়া জানান, একটি মাত্র পানির কল আছে। তাতে সবাই গোসল ও পরিস্কার পরিচ্চন্নতার কাজ করলে অল্প সময়ের মধ্যে তা একেবারে বিকল হয়ে যাবে। এজন্য ঘরের সামনে পুকুরের মধ্যে গর্ত করে নিয়েছেন। তাতেই পারিবারিক পরিস্কার পরিচ্চন্নতার কাজ করছেন। মাঝে মধ্যে হাটু সমান এই পানিতে গোসল পর্যন্ত করতে হয়।

গুচ্ছ গ্রামের উত্তর পাড়ে বসবাস করেন লিপি রানী দাস নামে একজন। পেশায় জেলে হলেও চরে থেকে ৭-৮টি গরু পালেন তারা। নদীতে এখন লোনা পানি। গরু ছাগল এই পানি পান করতে পারে না। এজন্য মিস্টি পানির প্রয়োজন হয়। পুকুরে পানি নেই। উপায় না পেয়ে ঘরের পাশে গর্ত করে নিয়েছেন। তাতে জমে থাকা পানি নিজেরা ও ব্যবহার করেন। আবার গরু ছাগলও পান করে।

তিনি আরো জানান, এখন শীত মৌসুম শুরু হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিছুদিন পর গর্তের পানি শুকিয়ে যাবে। তখন গরু ছাগল ও নিজেরে প্রয়োজন মিটানো অনেক কঠিন হবে বলে জানান তিনি।

শুধু লিপি, আফিয়া বা হাজেরা নয়। তরুবীথি ও ছায়াবীথি দুটি গুচ্ছ গ্রামের অনেকে নিজেদের প্রয়োজনে ঘরের সামনে গর্ত করে নিয়েছেন। সেই গর্তের পানি তাদের একমাত্র ভরসা।

চর আতাউরে প্রথম থেকে বসবাস করে আসছেন খোকন মাঝি। খোকন জানান, সরকার ভূমিহীনের বসবাসের জন্য এই চরে দুটি গুচ্ছগ্রাম ও একটি ব্যারাক হাউজ তৈরি করেছেন। ব্যারাক হাউজে কোন পুকুর না থাকলেও গুচ্চগ্রাম দুটিতে বিশাল দুটি পুকুর খনন করা হয়। সেই পুকুর গুলো এই চরে বসবাস করা চারশত পরিবার ও দুই সহশ্রাধিক গরু মহিষের জন্য যতেষ্ট ছিল। কিন্তু চার বছর আগে জোয়ারের স্রোতে পাড় ভেঙ্গে পুকুর গুলো সমতল হয়ে যায়। এর মধ্যে অনেক গুলো নলকুপও বিকল হয়ে যায়। তাতে মিস্টি পানির জন্য চরে একধনের হাহাকার পড়ে যায়। নদীর লোনা পানি ব্যবহারে মানুষের মধ্যে চর্ম রোগ দেখা দেয়। সরকারি ভাবে এখানে মানষের বসবাস এর ব্যবস্থা করা হলেও রক্ষাবেক্ষনের জন্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বারবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সবার কাছে আবেদন করেও কোন ফল পাওয়া যায় নি।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আলাউদ্দিন বলেন, হতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরআতাউরে বসবাস করা ভূমিহীনদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে মিস্টি পানির সংকট আছে। আমরা ইতিমধ্যে সেখানে নতুন একটি পুকুর খনন করার জন্য চিন্তা করতেছি। এছাড়া আগের পুকুর গুলো পুনরায় খনন করার বিষয়ে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।।
 
এফপি/অ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝