জন্মশতবর্ষেও নাচোল কৃষক বিদ্রোহের নেত্রী ইলা মিত্রের বেদখল হওয়া বাড়িটি উদ্ধার করতে পারেনি ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন। অথচ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাড়িসহ ২২ শতক জমি সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই মাসেই গেজেটও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু প্রায় ৯ বছরেও দখলমুক্ত করা হয়নি বাড়িটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শৈলকুপায় উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামে নাচোল কৃষক বিদ্রোহের নেত্রী ইলা মিত্রের বাড়িটি এখন ভগ্নপ্রায়। তিনি ছিলেন জমিদার কন্যা ও পুত্রবধূ। ১৯৫০ সালের প্রথম দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলায় সংঘটিত একটি কৃষক বিদ্রোহের প্রধান সংগঠক ছিলেন ইলামিত্র।
রাজশাহীর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে নাচেল কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় পুলিশের হাতে আটক হয়ে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হন তিনি। মুক্তি পেয়ে তিনি স্বামী কমরেড রমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে ভারতের মালদহের নাবাবগঞ্জ থানার রামচন্দ্র হাটের শ্বশুরের জমিদার বাড়ি দিনাজপুর চলে আসেন তিনি। ইলা মিত্র ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সুহৃদ।
শৈলকুপার বাগুটিয়া গ্রামে গিয়ে জানা যায় ইলা মিত্রের জন্ম কলকাতায় হলেও ছোট বেলার বেশকিছুটা সময় কেটেছে গ্রামের বাড়িতে। ১৭ শতক জমির উপর নির্মিত দোতলা ভবনে ৯টি কক্ষ রয়েছে। আছে একটি প্রধান ফটকযুক্ত শানবাঁধানো পুকুর।
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই বাড়িটি নির্মাণ করেন ইলা মিত্রের দাদা রাজমোহন সেন। পূর্বপুরুষেরা দেশত্যাগের পর বাড়িটি দখল হয়ে যায়। শুধু বাড়ি নয়, দখল করা হয়েছে ইলা মিত্রের বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের রেখে যাওয়া শত-শত বিঘা জমি।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাড়িসহ ২২ শতক জমি সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই মাসেই গেজেট প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রায় ৯ বছরেও দখলমুক্ত করা হয়নি বাড়িটি। বসবাসকারীদের দাবি, জনৈক খোদাবক্সের কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে বাড়িটির মালিক হন হাজী কিয়াম উদ্দিন। ১৯৭০ থেকে বাড়িতে বসবাস করছেন কিয়াম উদ্দিনের উত্তরসূরীরা।
তারা বলছেন, ‘প্রতিবছরই আমাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারিভাবে আশ্বাসই সার।’
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে ইলা মিত্রকে নিয়ে নতুন করে জাগরণ সৃষ্টি হয়। বার বার দাবি উঠে তার পৈত্রিক ভিটা দখলমুক্ত করার। ২০১১ সাল থেকে সাংগঠনিকভাবে ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ঝিনাইদহ, শৈলকুপা ও ঢাকায় মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিলসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্বারকলিপি পেশ করা হয়।
ইলা মিত্র স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ সদস্য সচিব ও জন্মশতবর্ষ উদযাপন পরিষদ আহ্বায়ক সুজন বিপ্লব জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় পুরাকীর্তি হিসেবে বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ঘোষণার প্রায় ৯ বছরেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িটি সংরক্ষণে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ইলা মিত্র স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ আহ্বায়ক আব্দুর রহমান মিল্টন জানান, কিংবদন্তি ইলা মিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হলেও শৈলকুপা উপজেলা প্রশাসান নির্বিকার হয়ে আছে।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস বলেছেন, বাড়িটিতে বর্তমানে যারা বসবাস করছেন তাদের দাবি তারা সম্পদটি কিনে নিয়েছেন। এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশের পর জমি অধিগ্রহণের কোনো নির্দেশনা আসেনি।
এফপি/রাজ