গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে আয়োজিত হলো ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
বুধবার বিকেলে কোটালীপাড়ার কালিগঞ্জ বাজার থেকে খেজুরবাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বাবুর খালজুড়ে চলে এ নৌকা বাইচ।
এই প্রতিযোগিতায় গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা ১০টি সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা ও বাচারী নৌকা অংশ নেয়। খালের বুকে শুরু হয় বৈঠার ছলাৎ–ছলাৎ শব্দ, কাশির বাদ্য, ঠিকারী ও জারি-সারি গানের তালে তৈরি হয় এক অনবদ্য পরিবেশ।
নৌকা বাইচ ছিল একেবারেই উৎসবমুখর। নৌকার পাশাপাশি নদীপাড়ে বসে যায় মেলার আমেজ। নারী-পুরুষ, তরুণ-প্রবীণ, এমনকি শিশুদেরও ভিড়ে দুই কূলে উপচে পড়ে দর্শকদের সমাগম। হাজারো মানুষের উপস্থিতি আর হর্ষধ্বনিতে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া বাইচ চলে টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত। একের পর এক ছিপ, কুচ আর কোষা নৌকার প্রতিযোগিতা দেখতে খালের দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে মানুষ উপভোগ করেন নির্মল আনন্দ। নৌকার মাঝিদের সাথে তাল মিলিয়ে সমর্থকদের হর্ষধ্বনি ও করতালি পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
শ্যামল বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক প্রবীণ গ্রামবাসী জানান, “আমাদের এলাকায় নৌকা বাইচের প্রচলন আজকের নয়। প্রায় দুই শত বছর আগে বিল এলাকার মানুষ বিনোদনের জন্য নৌকা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে। সেখান থেকেই এই ঐতিহ্যের সূত্রপাত, যা এখনও টিকে আছে।”
কলাবাড়ি গ্রামের গৃহিনী গিতা রানী বিশ্বাস বলেন, “নৌকা বাইচ মানে শুধু আনন্দ নয়, এটা পারিবারিক উৎসবও বটে। বাইচ উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসেন, বিশেষ খাবারের আয়োজন হয়, সবাই মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করি। নৌকা বাইচ আমাদের এলাকার মানুষের মনের খোরাক।”
নৌকা বাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, এ আয়োজন কেবল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নয়, বরং এলাকার সব মানুষের জন্য এক মহোৎসব। বৈচিত্র্যময় লোকসংগীত, মাঝিদের প্রাণশক্তি ও দর্শকদের সমর্থন মিলিয়ে তৈরি হয় অনন্য পরিবেশ।
কোটালীপাড়ার মানুষ বিশ্বাস করেন, এ ধরনের আয়োজনে শুধু ঐতিহ্যই টিকে থাকে না, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামীণ সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও মিলনমেলা।
এফপি/অআ