নওগাঁর রাণীনগরে প্রকাশ্যে এক নারীকে লাঠি দিয়ে পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
বুধবার বিকেল থেকে ৪৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। এর আগে গত ১৬ আগস্ট উপজেলার গুয়াতা গ্রামে ওই নারীকে পিটিয়ে নির্যাতনের এ ঘটনাটি ঘটে।
মারধর ও নির্যাতনের শিকার ওই নারীর নাম রেশমা বিবি (৪০)। তিনি উপজেলার গুয়াতা গ্রামের মানসিক প্রতিবন্ধী আব্দুস সালামের স্ত্রী। গুরুত্বর আহত অবস্থায় রেশমা বিবি নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনার দিন তার ছেলে রিমন হোসেনকেও (১৭) মারধর করে আহত করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গুয়াতা গ্রামের সামছুজ্জামান প্রামানিক (৬৫) নামে এক ব্যক্তি ওই নারীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করেন। এরপর নারীর মাথার চুল ধরে জমিতে ফেলে রাখে। এ সময় সামছুজ্জামানের সহযোগী এনামুলসহ কয়েকজন ওই নারী ও তার ছেলে রিমনকেও এলোপাতাড়ি মারধর করে আহত করেন।
তবে স্থানীয়দের ভাষ্যমতে- জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ওইদিন দু'পক্ষের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এতে দু'পক্ষের তিনজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, রেশমা বিবি (৪০) ও তার ছেলে রিমন হোসেন (১৭) এবং প্রতিপক্ষ সামসুজ্জামান প্রামানিক (৬৫)। তাদের মধ্যে সামসুজ্জামান ও রিমন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরেছে। আর নারী রেশমা বিবি নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই ঘটনায় দু'পক্ষ রাণীনগর থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভাইরাল হওয়া ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সামছুজ্জামান নামে ব্যক্তি ওই নারীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করছেন। আবার জমির কাদা মাটিতে ফেলে মাথার চুল ধরে নির্যাতন করতেও দেখা গেছে।
ওই নারী রেশমা বিবি জানান, তার স্বামী আব্দুস সালাম একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। তার নামে গুয়াতা মৌজায় প্রায় ৮ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০২৪ সালে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি সামছুজ্জামান কৌশলে মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেন, যদিও জমিটির প্রকৃত বাজারমূল্য প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে সামছুজ্জামান জমিটি আরেক ব্যক্তি দামুয়া গ্রামের রিপনের কাছে হস্তান্তর করে। এতে প্রতারিত হয়ে আমরা আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। এছাড়া জমি উদ্ধারের জন্য থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগও করেছি।
তিনি জানান, গত ১৬ আগস্ট সকালে সামছুজ্জামান ও তার সহযোগী এনামুল হক জোরপূর্বক ওই জমিতে ধান রোপণের চেষ্টা করে। এ সময় বাধা দিলে সামছুজ্জামান আমাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করেন। আমার মাথার চুল ধরে জমির মাটিতে ফেলেও মারধর করে। সামছুজ্জামানের হাতে থাকা লাঠির আঘাতে আমি রক্তাক্ত জখমের শিকার হই। এ সময় এনামুলসহ কয়েকজন এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ছেলে রিমনকেও তারা মারধর করে। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছে, বিচার চাই।
এদিকে সামছুজ্জামান প্রামানিক বলেন, রেশমার স্বামী আব্দুস সালাম আমার কাছে তার জমি বিক্রি করেছে। সেই জমি আমি দামুয়া গ্রামের রিপনের নিকট বিক্রি করেছি। রিপন আমাকে ওই জমিটি চাষাবাদের জন্য বর্গা দিয়েছে। সেই জমিতে আমি ধান রোপণ করতে গেলে সালামের স্ত্রী রেশমা ও ছেলে রিমন আমাকে বাঁধা দিয়ে মারপিট করে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং আমার একটি হাতও গুরুতর জখম করেছে। আত্মরক্ষাতে আমি তাদের মেরেছি। তিনি বলেন, জমির বর্তমান মালিক রিপন। বিচার চেয়ে আমি থানায় একটি অভিযোগ করেছি।
এ ব্যাপারে রাণীনগর থানার ওসি আব্দুল হাফিজ মো. রায়হান বলেন, বিবাদমান জমি নিয়ে মারপিটের ঘটনায় এক পক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছে, আরেক পক্ষ এজাহার দায়ের করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এফপি/রাজ