রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা ভূমি অফিসে চলছে অদ্ভুত কার্যক্রম। ভিডিওচিত্রে ধরা পড়েছে— অফিসের হেডস্টেনো সাজেদুর রহমান ও অফিস সহকারী রোনক রাত ৯টার পর দালাল চক্রের দুই সদস্যকে নিয়ে অফিসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে কাচিকগেট লাগিয়ে গোপনীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাজেদুর ও রোনক প্রধান ফটকের তালা খুলে দিলে নৈশপ্রহরী রমজান আলী তাদের বের হতে সাহায্য করছেন। এরপর সাজেদুর ও রোনক মোটরসাইকেলে করে বের হয়ে যান।
এখানেই শেষ নয়। আরও একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নৈশপ্রহরী রমজান আলী হেডস্টেনোর চেয়ারে বসে কম্পিউটারে অফিসের কাজ করছেন। যা প্রশাসনিক নিয়মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের এক সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাজেদুর রহমান তো প্রায়ই অফিসের কাজ রাতে করে, এটাতো নতুন কিছু না। অনেক সময় নৈশপ্রহরী রমজানকেও তিনি অফিসের কাজ করতে বসিয়ে দেন। অফিস আসলে তাদের ইচ্ছামতোই চলে, কারো কিছু বলার সাহস নেই।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেডস্টেনো সাজেদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রাতে কাজ করার মতো আসলে কিছু নেই। তবে টানা দুই দিন অফিসের কাজের চাপ বেশি থাকায় রাত পর্যন্ত কাজ করেছি। এর পর থেকে নিয়মিত অফিস সময় বিকেল ৫টা পর্যন্তই করি। প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাত ৯টায় কাজ করার অভিযোগ সঠিক নয়। হ্যাঁ, একদিন রাত ৯টা পর্যন্ত অফিসে কাজ করেছি, তবে অন্য কোনো জায়গায় নয়—অফিসেই করেছি। মাঝে মাঝে সাড়ে সাতটা-আটটা পর্যন্ত কাজ করি, তবে একদিন মাত্র সাড়ে নয়টা পর্যন্ত করেছি। এ বিষয়ে স্যাররাও জানেন। পরে তাঁরা নিষেধ করায় আর রাতের বেলায় কাজ করি না।”
নৈশপ্রহরী রমজান আলী অফিসে তাঁর (সাজেদুরের) চেয়ারে বসে কম্পিউটার ব্যবহার করার বিষয়ে জানতে চাইলে সাজেদুর রহমান বলেন, রমজান আলী কখনো অফিসের কোনো কাজ করেননি। ভিডিওতে যা দেখা গেছে, সেটা শুধু একদিনের ঘটনা। ওই দিন তিনি নামজারির একটি আবেদন করছিলেন, তখন একদিনের জন্য বসেছিলেন।
স্থানীয় সচেতন মহলের প্রশ্ন— ভূমি অফিসের এমন অনিয়ম ও দালাল চক্রের প্রভাবের কারণে সাধারণ মানুষ কি ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না?
চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদাউস এ বিষয়ে বলেন, আমরা ভিডিওচিত্র ও অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছি। অফিসে যদি রাতের বেলায় কোনো ধরনের অস্বাভাবিক কার্যক্রম বা প্রশাসনিক নিয়ম বহির্ভূত কাজ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমি অফিস জনগণের সেবার জায়গা, এখানে দালাল বা অনিয়মের কোনো স্থান নেই। বিশেষ করে হেডস্টেনো সাজেদুর রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব শুধু পাহারা দেওয়া, অফিসের কাজ করা নয়। কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে থাকে, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাধারণ মানুষ যেন সঠিক সময়ে ও নিয়ম অনুযায়ী সেবা পান, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
আমাদের নির্দিষ্ট কোনো জরুরি কাজ থাকলে মাঝে মাঝে একটু রাত পর্যন্ত অফিস হয়তো চলতে পারে, তবে প্রধান ফটকের তালা ঝুলিয়ে রাতে অফিস করার বিষয়টি আমার জানা নেই। এমনকি আজ যেসব অভিযোগ বা ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে, সেসব বিষয়ও আমার জানা নেই।
এফপি/এমআই