কক্সবাজারে জমির মালিকানা নিয়ে রামু উপজেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। বন বিভাগের নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে প্রকাশ্যে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের তুমুল বাকবিতন্ডায় সোশালমিডিয়ায় চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় হিমছড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদকের হাতে আসা ৪৮ সেকেন্ড এর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রামু উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল বজ্রকণ্ঠে ধমকের সুরে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নূরুল ইসলাম ও কক্সবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক সহ বনকর্মীদের শাসিয়ে কথা বলছেন। প্রকাশ্যে স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক ও গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে এসিল্যান্ড এবং বনকর্মীদের বাকবিতন্ডা চলে। পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাকবিতন্ডা থামে বলে জানা যায়। তবে এসিল্যান্ড এর আচরণ নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে সোশালমিডিয়ায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সে সময় ঘটনাস্থলে অবস্থান করা কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী জানান, এসিল্যান্ড যেই পরিমাণ মারমুখী আচরণ করেছেন তাতে বনকর্মীরা ক্ষিপ্ত হলে দুই বাহিনীর মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত হত।
কক্সবাজারের তরুণ আইনজীবী মোহাম্মদ রাশেদ লিখেছেন, সংবিধান অনুযায়ী উনি জনগণের সেবক। কিন্তু উনার ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে উনি নবাবজাদা আর জনগণ তাহার চাকর। Article:২১৷ (১) সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিকদায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।
(২) সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।
সূত্র বলছে, মেরিন ড্রাইভে হিমছড়ি ঝর্ণাকে কেন্দ্র করে বনবিভাগের অধীনে হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান, বনবিভাগের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিসর্গ এবং রামু উপজেলা প্রশাসনের অধীনে হিমছড়ি বাজার, পার্কিং, পাবলিক টয়লেট ঘীরে আশেপাশের জায়গা নিয়ে এমন বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। যা প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সোহেল জানিয়েছেন, হিমছড়ি ঝর্ণাটি বনবিভাগের পক্ষে ইজারা প্রদান করা হয়। আর এই ঝর্ণার সামনের বাজার, পার্কিং ইজারা প্রদান করে রামু উপজেলা প্রশাসন। হিমছড়ি বাজারের পূর্বে গত ৪ বছর আগে এনজিওর অর্থায়নে একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। যা প্রতি বছর ইজারা দেন উপজেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি পর্যটন স্পট ঝর্ণার কিছু সংস্কার কাজ শুরু করে বনবিভাগ। এ সংস্কারের অংশ হিসেবে নতুন গেইট নিমার্ণের জন্য পাবলিক টয়লেটের কিছু অংশ বৃহস্পতিবার সকালে ভেঙ্গে দেয় বনবিভাগ। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর রামু উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি ঘটনাস্থলে এসে টয়লেট ভেঙ্গে দেয়ার কারণ জানতে চায় বনবিভাগের কর্মকর্তার কাছে। বনবিভাগ গেইট নির্মাণের প্রয়োজনীয় এবং টয়লেটটি বনবিভাগের জমিতে রয়েছে বলে দাবি করেন। এরপর সহকারি কমিশনার ভূমি হিমছড়ি ঝর্ণার উত্তর পাশে বনবিভাগের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিসর্গর পাশে অবস্থিত কিছু স্থাপনা ১ নম্বর খাস খতিয়ানের দাবি করে ভাংচুর করা হয়। বিষয়টি জানা-জানির পর বনবিভাগীয় কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেলে তর্কের সৃষ্টি হয়।
কক্সবাজার রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক জানান, নিসর্গ পুরোটাই বনবিভাগের ২ নম্বর খতিয়ানের অধীনে। যেখানে থাকা বন পাহারার গোল ঘর, ঘেরা-বেড়া, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের সাইনবোর্ডটি ভেঙ্গে দিয়েছেন সহকারি কমিশনার ভূমি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বনবিভাগের জমিতে পাবলিক টয়লেটটি পরিচালিত হলেও কোন হস্তক্ষেপ করা হয়নি। ঝর্ণার প্রবেশ গেইট নিমার্ণের কারণে তার কিছু অংশ ভাঙ্গতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গেজেট নোটিফিকেশন মূলে রিজার্ভ ফেরস্ট এবং প্রটেক্টেড এড়িয়া হিসাবে ঘোষিত।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শত ভাগ বনবিভাগের জমিতে সহকারি কমিশনার ভূমি ভাংচুর করেছে। এতে বনবিভাগের ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর প্রকাশ্যে অপদস্থ করা হয়েছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কি করে দেখা হচ্ছে। না হয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন মহল নিদের্শ প্রদান করবেন।
এ প্রসঙ্গে রামু উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুলের মুঠোফোনে একাধিক ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এখানে বনবিভাগ এবং প্রশাসন উভয় পক্ষের জায়গা রয়েছে। আমরা উভয় পক্ষ সরকারের স্বার্থে কাজ করছি। বিষয়টি নিয়ে সহকারি কমিশনার ভূমির সাথে বনভিাগের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে এর নিরসন করেছি। তিনি বলেন, এখানে বিরোধের কিছু নেই, উভয় পক্ষই তো সরকারের জন্য কাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও আসা একটু বিব্রতকর।
এফপি/এমআই